গতকাল ৪ মিনিটের ইনজুরি টাইমও তখন শেষ। কর্নার হলেই রেফারি ক্রিস্টাল জন বাঁশি বাজিয়ে দেবেন। কিন্তু সেই সময়েই হার্নান্দেসের বাঁক খাওয়ানো কর্নার বাতাসে ভাসতেই তা হেডে গোল করে এটিকের ঘরে তিন পয়েন্ট এনে দিলেন সুপারসাব বলবন্ত সিং। যিনি এডুয়ার্ডোর বদলে মাঠে এসেছিলেন ৯১ মিনিটে। সোমবার যুবভারতীতে নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে এই এক গোলে জিতেই কলকাতা আইএসএলের লিগ টেবিলে আবার মগডালে উঠে পড়ল। ১৪ ম্যাচে এটিকের পয়েন্ট ২৭। সমান ম্যাচে গোয়ারও তাই। কিন্তু প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাসরা এগিয়ে রইলেন গোলের গড়ে।
হাবাস জানতেন নর্থইস্টকে গুরুত্ব না দিলে ভুল হবে। সাধারণত ৩-৫-২ ফর্মেশনকে সামান্য বদল করে দল নামাচ্ছেন কলকাতার কোচ। কিন্তু এ দিন পাহাড়ি দলের দুই বিদেশি স্ট্রাইকার অ্যান্ড্রু কিয়ঘ এবং লারস সিমনের দাপটে ৪-৪-২-তে আটকে থাকতে হল প্রীতম কোটালদের। দীর্ঘদিনের সতীর্থ ডেভিড উইলিয়ামস চোটের জন্য বাইরে। তিনি না থাকায় কৃষ্ণও গোল পাচ্ছেন না। টানা পাঁচ ম্যাচে গোল নেই তাঁর। এ দিন কৃষ্ণের সঙ্গে জবি জাস্টিনকে নামানো হয়েছিল। ডাহা ফেল করলেন কেরলের এই স্ট্রাইকার। তাঁকে তুলে নিতে হল বিরতির পরে। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধে অন্তত দুটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল এটিকে। তার মধ্যে সোসাইরাজের শট তো গোল লাইনের উপর থেকে বাঁচালেন নর্থইস্টের স্টপার মিসলাভ কোমারস্কি। এটিকের জাভি হার্নান্দেজের একটি শট রুখে দেন শুভাশিস।
নব্বই মিনিটে বলবন্ত সিংহ মাঠে নামলেন। নেমে চার মিনিটের মধ্যেই অসাধারণ হেডে গোলটা করে ফের এটিকে-কে লিগ শীর্ষে নিয়ে গেলেন পঞ্জাব-তনয়। অতিরিক্ত সময়ের শেষ বাঁশি বাজার আগের মুহূর্তে জাভি হার্নান্দেজের বাঁক খাওয়া কর্নার উড়ে এসেছিল বলবন্তের মাথায়। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থেকেই দিন কেটে যাচ্ছিল এটিকে স্ট্রাইকারের। এ বারের আইএসএলে আট ম্যাচে মাত্র ৯৯ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। পাঞ্জাব তনয় গোল করে টিমকে জিতিয়ে বললেন, ‘সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। গোল করে টিমকে জেতাতে পেরে তাই আমি তৃপ্ত।’
আগের চার ম্যাচে গোল পাননি রয় কৃষ্ণ। এ দিন পেতে পারতেন। বিরতির কিছুক্ষণ আগে নর্থ ইস্টের গোলকিপার শুভাশিস রায়চৌধুরীকে একা পেয়েও তাঁর গায়ে মারলেন রয়। দ্বিতীয়ার্ধে সুসাইরাজের শট গোললাইন থেকে ফিরল। সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন প্রীতমও। আসলে চোটের জন্য ডেভিড উইলিয়ামস না খেলায় রয়ের গোলের সাপ্লাই লাইন কেটে গিয়েছে। পরের ম্যাচে ফিরছেন ডেভিড।
নর্থইস্ট ইউনাইটেড টিমটা এ বার গঠিত হয়েছিল যাঁর উপর ভরসা করে, সেই ঘানার বিশ্বকাপার আসামোয়া গিয়ান চোট পেয়ে ফিরে যাওয়ায় টিমটা ছন্দ হারায়। ৮ ম্যাচে আসামোয়া করেছিলেন ৪ গোল। তাঁর পরিবর্তে আসা আইরিশ স্ট্রাইকার অ্যান্ড্রু কেয়ঘ মাত্র ৬ দিন আগে এসেছেন। এ দিন তিনিই ১৫ মিনিটে প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন। তাঁর ফ্লিক কলকাতার পোস্টে লেগে ফেরে। অ্যান্ড্রুর শট পোস্টে লাগা বাদ দিলে নর্থ ইস্ট আরও একটি ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল। চাভাসের হেড তৎপরতার সঙ্গে বাঁচালেন এটিকে কিপার অরিন্দম। শেষ দিকে গোল ছেড়ে প্রায় নিজেদের মিডফিল্ডারদের দাঁড়ানোর জায়গায় গিয়ে একটি একের বিরুদ্ধে এক সেভ করেন অরিন্দম। ম্যাচে দুই টিমের দুই বাঙালি কিপার অরিন্দম ও শুভাশিস নজর কাড়েন। এক সময় দু’জনে এক সঙ্গে খেলতেন জাতীয় টিমে। এখন দু’জনেরই লড়াই জাতীয় টিমে ফেরার।