আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার বুলি আউড়িয়ে দেশবাসীকে যে স্বপ্নের ফানুসে চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এক বছর পেরনোর আগেই যে তা ফুটো হয়ে গিয়েছে, সে কথা স্পষ্ট। কারণ প্রায় রোজদিনই তলানিতে নামার নতুন নতুন রেকর্ড করে চলেছে দেশের অর্থনীতি। যে কারণে সাম্প্রতিক কালে কম সমালোচনাও সহ্য করতে হয়নি কেন্দ্রকে। কিন্তু এতদিনের সবথেকে বড় ধাক্কাটা দিল বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতির ম্যাগাজিন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় লেখা হয়েছে, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! সম্প্রতি তাদের তরফে প্রকাশ করা ম্যাগাজিনের কভার ছবিতে ভারতকে ‘অসহিষ্ণু’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আমদানি করা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি)-র সমালোচনাও করা হয়েছে এখানে। বিষয়টি নিয়ে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর পর্যবেক্ষণ, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার নিজেদের সাম্প্রতিক সংস্করণের কভার ছবি টুইটারে পোস্ট করে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ লেখে, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে যেভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’ ভারতে বসবাসকারী ২০ কোটি মুসলিম ভয় পাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী দেশকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন। ‘নরেন্দ্র মোদী পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রকে ভাগ করতে চাইছেন’ নামক শিরোনাম-সহ প্রধান প্রবন্ধটি লেখা হয়েছে এই ম্যাগাজিনে। প্রবন্ধে আরও লেখা হয়েছে, ‘এই ভাগাভাগির দ্বারা মোদী এবং বিজেপি রাজনৈতিকভাবে সাফল্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা ধর্ম এবং জাতীয় নাগরিকত্বকে ভিত্তি করেই এই ভাগাভাগি করা হচ্ছে।’ এনআরসি ও সিএএ-র প্রসঙ্গ টেনে লেখা হয়েছে, ‘মোদী সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে ১.৩ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে আসল ভারতীয়দের একটি পঞ্জীকরণ করা, যাতে বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করা যায়। বারবার করে আবেগে আগুন লাগিয়ে এই প্রক্রিয়া বহু বছর ধরে চালানো হতে পারে। যা শেষ হবে না, চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আবার নতুন করে করা হবে।’
কিন্তু দেশে এত সমস্যা থাকতে কেন এসবের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে? দ্য ইকোনমিস্টের ব্যাখ্যা, ‘এই ধরনের বিষয় অস্বস্তিকর সওয়াল থেকে নজর ঘুরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যেমন অর্থনীতি। গতবছর বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারে ফেরার পর থেকেই যা সমস্যার মধ্যে যাচ্ছে।’ পৃথিবীর অন্যতম সেরা হিসেবে পরিচিত এই ম্যাগাজিনের এহেন কটাক্ষ স্বাভাবিকভাবেই হজম করে উঠতে পারেনি গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতা বিজয় চৌটিওয়ালে ইকোনমিস্টকে ‘ঔদ্ধত্য’ এবং ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা’ সম্পন্ন বলে কটাক্ষ করেছেন। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালেই চলে গিয়েছে। কিন্তু দ্য ইকোনমিস্টের সম্পাদকগণ এখনও ঔপনিবেশিক যুগে বসবাস করছেন।’