‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’। প্রবাদটা সবসময় খাটে না, প্রমাণ মিলল কল্যাণীতে। প্রথম ওভারে রবি কিরণের পঞ্চম বলে অভিষেক রামন (০) ফিরে যাওয়ার পর বাংলা শিবিরের ধুকপুকুনি শুরু হয়ে গিয়েছিল। হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল ষষ্ঠ ওভারে অভিমন্যু ঈশ্বরন (১২) আউট হওয়ার পর। হাল ধরলেন ‘উপেক্ষিত’ মনোজ। এবার তিনি আইপিএলের নিলামে দল পাননি। এমনকী, এখন জাতীয় স্তরের টুর্নামেন্টগুলিতেও তাঁকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। বিসিসিআই আয়োজিত চ্যালেঞ্জার ট্রফিতেও সুযোগ পাচ্ছেন না। তাঁর হাতে সম্বল বলতে ছিল শুধু রনজি ট্রফি। আর সেখানেই সব উপেক্ষার জবাব দিলেন মনোজ। ব্যাট হাতে বুঝিয়ে দিলেন, কেন তাঁকে একসময় দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের তালিকায় রাখা হত। রনজি ট্রফিতে নিজের কেরিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকালেন মনোজ। আর তাঁর এই ত্রিশতরানে ভর করেই কল্যাণীতে হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে রানের পাহাড় গড়ল বাংলা।
রবিবার খেলার শেষে মনোজ অপরাজিত ছিলেন ১৫৬ রানে। পাঁচ উইকেট হারিয়ে বাংলার রান ছিল ৩৬৬। সোমবার সেখান থেকেই শুরু করলেন মনোজ। ২৯৬ বলে পৌঁছলেন দ্বিশতরানে। প্রথম শ্রেণির কেরিয়ারে যা তাঁর ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরি। ২৫০ রানে পৌঁছতে মনোজ নিলেন ৩৭৭ বল। প্রথম শ্রেণির কেরিয়ারে প্রথম বার ত্রিশতরানে পৌঁছতে নিলেন ৪১৪ বল। মারলেন ৩০টি চার ও পাঁচটি ছয়।
সোমবার সকাল থেকেই মারকুটে ব্যাটিং শুরু করেন বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক। এবং পেরিয়ে যান কাঙ্ক্ষিত ত্রিশতরানের গণ্ডি। এটি তাঁর কেরিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি এবং ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরি। এর আগে তাঁর কেরিয়ারের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২৬৭।বাংলা ইনিংস ঘোষণা করে ৬৩৫ রানে।
এই ইনিংস জাতীয় নির্বাচকদের তাঁর প্রতি উপেক্ষার জবাব বলে মনে করছে ক্রিকেটমহল। চ্যালেঞ্জার ট্রফি-সহ জাতীয় স্তরের কোনও দলে তাঁর জায়গা হচ্ছে না। যা মানতে না পেরে প্রশ্ন তুলেছিলেন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তাঁর মন্তব্য জন্ম দিয়েছিল বিতর্কের। গত ডিসেম্বরের আইপিএল নিলামেও উপেক্ষিত থেকেছেন তিনি। কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে নিতে আগ্রহ দেখায়নি।
কিছুদিন আগে ইডেনে অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে বাংলার ড্রেসিংরুম থেকে মনোজের অভিযোগে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল জাতীয় নির্বাচক দেবাং গান্ধীকে। যা নিয়েও বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। গত মরসুমেও তিনি ছিলেন বাংলার অধিনায়ক। কিন্তু এই মরসুমের গোড়া থেকেই অভিমন্যু ঈশ্বরনকে অধিনায়ক করা হয়েছিল। এই মরসুমে রান পেলেও বড় রান আসছিল না তাঁর ব্যাটে। একবারই শুধু রঞ্জিতে পঞ্চাশের গণ্ডি ছাড়িয়েছিলেন। তাই মনোজের কেরিয়ারে এই তিনশো রানের ম্যারাথন ইনিংসের গুরুত্ব অপরিসীম।