সংসদের ভিতরে প্রশ্নোত্তর পর্বে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু নতুন উপাদান প্রয়োগ করতে চান তিনি। তুলে ধরতে চান সাধারণ মানুষের দাবি দাওয়া। তা করতেই এবার এক অভিনব উদ্যোগ নিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বাগ্রে এনআরসি এবং সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন। সংসদের দুই কক্ষে সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে সরবও হয়েছিল তৃণমূল। দেশের প্রায় সব অবিজেপি দলই এই দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও পথে নেমেছেন। এরই প্রেক্ষিতে আসন্ন বাজেট অধিবেশনের প্রাক্কালে সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে আমজনতার সহায়তা চেয়েছেন ডেরেক। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত মূলত নেটিজেনদের কাছে আবেদন করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, রাজ্যসভায় ডেরেক ও তাঁর সতীর্থরা সিএবি নিয়ে বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন। বিলের বিপক্ষে ভোট দিলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিরোধীদের সব আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে বিল পাশ হয় উভয়কক্ষেই। সংসদে পাশ হলেও দেশজুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের উত্তাপ বাড়তে থাকে। বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই পথে নেমেছেন। ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় পদযাত্রা করে কেন্দ্রের এই আইনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে তৎপর হয়েছেন তিনি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সিএএ প্রত্যাহারের দাবিতে সরব। অর্থাৎ সংসদে বস্তুত মসৃণভাবে বিল পাশ করে সিএএ কার্যকর করা হলেও তার বিরুদ্ধে সমাজের এক বিরাট অংশে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
যার জেরে শুধু রাজনৈতিক দলগুলিই নয়, পড়ুয়ারাও সক্রিয় প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। দিল্লীর শাহিনবাগ থেকে শুরু করে কলকাতা সহ দেশের নানা প্রান্তে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূলের এবং পার্ক সার্কাসে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সিএএ-র বিরুদ্ধে ধর্নায় বসেছে। অর্থাৎ দলীয় পরিসরের বাইরেও আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ছে। যা সামগ্রিকভাবে চাপে ফেলতে পারে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, আন্দোলনের এই আবহকে কাজে লাগাতে দলের সংসদীয় কাজের সঙ্গে আমজনতার যোগসূত্র তৈরির চেষ্টা করছে তৃণমূল। বিশেষ করে আসন্ন বাজেট অধিবেশনে মমতার দলের কাছে এইসব আন্দোলনই অস্ত্র হয়ে উঠবে।
সাধারণত দলই তার প্রতিনিধিদের সংসদীয় কাজকর্ম নির্ধারিত করে দেয়। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ডেরেক। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, তৃণমূল তার কর্মকাণ্ড নিয়ে জনসমাজের মতামত জানায় আগ্রহী। তাঁর দাবি, সংসদের ভিতরে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু নতুন উপাদান প্রয়োগ করতে চান তিনি। সেই বিষয়ে সাধারণ নাগরিক থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কিছু বক্তব্য থাকলে তাঁকে, জানানোর আবেদন করেছেন ডেরেক। পরামর্শ বা প্রশ্ন পাঠানোর জন্য ফেসবুক পেজে দিয়ে দিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত লিঙ্কও। সিএএ-কে কেন্দ্র করে চলতি বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিকায় সংসদের প্রশ্ন-উত্তর পর্বকে কাজে লাগিয়ে যে এবার মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল, তা বলাই বাহুল্য।