জেএনইউ, যাদবপুর ছাড়িয়ে এনআরসি-সিএএ বিরোধী প্রতিবাদের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসেও। সেখানে শীতের রাতেও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছিল গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে। তার মধ্যেই আচমকা হামলা চালাল একদল দুষ্কৃতী। সকলের হাতেই লাঠি, রড, উইকেট। অতর্কিতে মারধর করতে শুরু করল ছাত্রদের। সংঘর্ষে আহত হন অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র স্বপ্ননীল মুখোপাধ্যায় এবং ফাল্গুনী পান নামে দুই পড়ুয়া। তাঁরা দু’জনেই এসএফআই করেন বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে হামলাকারীরা এবিভিপির সদস্য বলেই অভিযোগ উঠেছে সেখানে উপস্থিত থাকা ছাত্রদের তরফে।
চলতি মাসের পাঁচ তারিখে অনেকটা এই ধাঁচেই আক্রমণ নেমে এসেছিল জেএনইউয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর। হস্টেলে ঢুকে নির্বিচারে মারধর করা হয়েছিল অধ্যাপিকা ও ছাত্রীদের। পরে জানা যায় এবিভিপির সদস্যরাই মুখ বেঁধে, অস্ত্র হাতে নিয়ে ওই হামলা চালায়। এবার ঠিক তেমনটাই দেখা গেল বিশ্বভারতীতেও। তবে এখানেই শেষ নয়। আহত অবস্থায় ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ারসন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, সেখানে ঢুকেও ফের একপ্রস্ত মারধর করে এবিভিপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। আজ সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গোটা হাসপাতাল চত্ত্বর ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সারা রাজ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাত থেকেই ছড়িয়ে পড়ে মারধরের ছবি এবং ভিডিও। মারমুখী বেশ কয়েক জনকে দেখা গিয়েছে ভাঙা উইকেট ইত্যাদি হাতে। হাসপাতালে ঢুকে মারতে চাওয়ার ভিডিও-ও প্রকাশ্যে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বভারতীর মতো ক্যাম্পাসের কড়া নিরাপত্তা ভেঙে অত রাতে অত জন বহিরাগত দুষ্কৃতী ঢুকল কী করে ভিতরে? ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, ভিসি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সম্মতি ও প্রশ্রয়েই সবটা হয়েছে। কারণ তিনি নিজেই অতরাতে গাড়ি করে ক্যাম্পাসে এসে ঢোকেন এবং সঙ্গে করে এবিভিপির ওই সদস্যদের নিয়ে আসেন। বিদ্যাভবন বয়েজ হস্টেলের সামনে চলে হাঙ্গামা। এবিভিপির ছাত্রনেতা অচিন্ত্য বাগদি ও সাবির আলির বিরুদ্ধেও থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। পাশাপাশি দাবি উঠেছে ভিসির পদত্যাগেরও। যদিও এবিভিপি তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আহত পড়ুয়া ফাল্গুনী পান অভিযোগ করেন, ‘বুধবার রাতে হঠাৎই ক্যাম্পাসে ঢোকে ভিসির গাড়ি। সেই গাড়ির সঙ্গেই ছিল একাধিক বাইক, যাতে ছিল এবিভিপির সদস্যরা। রাত ১১টা নাগাদ বিদ্যাভবনের ছাত্রাবাসে বাঁশ, রড নিয়ে চড়াও হয়ে মারধর করতে থাকে আমাদের। হুমকি দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেন প্রতিবাদ কর্মসূচি করছি আমরা। আমাদের হাসপাতালে আনা হলে সেখানেও ঢুকে এসে মারে।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দফায় দফায় বিক্ষোভ, মিছিল করছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। এই অবস্থায় দিন কয়েক আগেই সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বিশ্বভারতীতে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে গেলে তাঁকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখান ছাত্রছাত্রীরা। তার পরেও স্বপনবাবু ওই আলোচনায় অংশগ্রহণ করলে কালো পতাকা দেখানো হয় তাঁকে। সেই ঘটনারই ‘জবাব’ দিতে এই আক্রমণ বলে মনে করছেন অনেকে।