রবিবার সন্ধ্যায় কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দিল্লীর জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়। সেদিন সন্ধ্যার পর হঠাতই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবরমতী গার্লস হস্টেলে ঢুকে তাণ্ডব চালায় একদল মুখোশধারি দুষ্কৃতী। রড, লাঠি, ব্যাট দিয়ে আক্রমণ করা হয় পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের। যাতে গুরুতর জখম হন ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ, অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন-সহ বহু পড়ুয়া। এই ঘটনায় প্রথম থেকেই গেরুয়া ছাত্র সংগঠন এবিভিপির দিকে আঙুল তুলে আসছে জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠন। আর এখন প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানাচ্ছে, ওই দিন ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়েই হামলা চালিয়েছিল মুখোশধারি দুষ্কৃতীরা। মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসে বেড়িয়েছে এই রিপোর্ট।
প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধে নাগাদ মুখে কাপড় বেঁধে আচমকাই জেএনইউ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে একদল দুষ্কৃতী। সামনে যে-ই আসে, তাকেই ধরে মারধর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় মেয়েদের সবরমতী হস্টেল। সেসময়ই গুরুতর আহত হন জেএনইউ-র ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ঐশী ঘোষ। মাথা ফেটে যায় তাঁর। এমনকি যেসব অধ্যাপক, অধ্যাপিকারা সেই সময় ছাত্র ছাত্রীদের বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসেন, তাঁদের ওপরও হামলা চালায় ওই দুষ্কৃতীরা। বেশ পরিকল্পনা করেই যে এই হামলা করা হয়েছে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল নানা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের স্ক্রিনশট দেখেই স্পষ্ট।
যদিও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত হামলার দায় স্বীকার করে করল হিন্দু রক্ষা দল নামের এক সংগঠন। সেই সংগঠনের তরফে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে বলা হয়েছে, তাদের দলের কর্মীরাই জেএনইউ ক্যাম্পাসে হিংসা ছড়িয়েছে। এই সংগঠনে সভাপতি পিঙ্কি চৌধুরীর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার দায় স্বীকার করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি দেশ বিরোধী কার্যকলাপ হয়, সেই কারণে হামলা চালানো হয়েছে তাদের তরফে। আগামী দিনেও হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছেন পিঙ্কি চোধুরী।
তবে রবিবারের ঘটনার পর থেকে যেসব ভিডিও-ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা গেছে, সশস্ত্র অবস্থায় ঘুরছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি-র সদস্যরাই। যেমন সেদিন ক্যাম্পাসে হামলার ঘন্টাখানেক আগের একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে বিকাশ প্যাটেল নামের এক এবিভিপি সমর্থককে। বিকাশ প্যাটেল জেএনইউতে এবিভিপি-র কার্যকরী কমিটির সদস্য বলে সূত্রের খবর। তিনি একটি ফাইবার-গ্লাস ব্যাটন হাতে ঘুরছিলেন। সাধারণত পুলিশ যে ব্যাটন ব্যবহার করে, বিকাশের হাতে সেই ব্যাটনই দেখা গিয়েছে।
আবার তাঁর পাশেই নীল-হলুদ সোয়েটার পরা এক ছাত্রকে ডাণ্ডা হাতে দেখে গিয়েছে। অন্য একটি ছবিতে যাকে সশস্ত্র একটা দলকে জেএনইউ ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। এছাড়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, হামলার পর অন্ধকারে যখন ‘সশস্ত্র বাহিনী’ ক্যাম্পাস ছাড়ছে, তখন তার মধ্যে রয়েছেন বিকাশ প্যাটেল-সহ বেশ কয়েকজন ছাত্র। শুধু তাই নয়। লাঠি-ডাণ্ডা নিয়ে পরিকল্পিত এই হামলা নিশ্চিত করতে অভিযুক্তরা একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিল বলে খবর।