রবিবার সন্ধ্যায় কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দিল্লীর জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়। সেদিন সন্ধ্যায় লোহার রড, ব্যাট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত মেয়েদের সবরমতী হস্টেলে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় এবিভিপির গুন্ডারা। যাতে গুরুতর জখম হন ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ-সহ বহু পড়ুয়া। আর তার পর থেকেই একাধিক ভিডিও এবং ছবি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রকাশ্যে এসেছে। যে ছবি আর ভিডিওতে দেখে গেছে, সশস্ত্র অবস্থায় ঘুরছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি-র সদস্যরা।
যেমন সেদিন ক্যাম্পাসে হামলার ঘন্টাখানেক আগের একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক এবিভিপি সমর্থককে। বিকাশ প্যাটেল নামে ওই এবিভিপি সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে। বিকাশ প্যাটেল ওই জেএনইউ-এর এবিভিপি-র কার্যকরী কমিটির সদস্য বলে সূত্রের খবর। তিনি একটি ফাইবার-গ্লাস ব্যাটন হাতে ঘুরছিলেন। সাধারণত পুলিশ যে ব্যাটন ব্যবহার করে, বিকাশের হাতে সেই ব্যাটনই দেখা গিয়েছে।
তাঁর পাশেই নীল-হলুদ সোয়েটার পরা এক ছাত্রকে ডাণ্ডা হাতে দেখে গিয়েছে। আরও একটা ছবিতে দেখা গিয়েছে, ওই ছাত্র সশস্ত্র একটা দলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ দেখিয়ে রাস্তা থেকে বাঁদিকে, যেদিকে ক্যাম্পাস, সেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপরে একটা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, হামলার পর অন্ধকারে যখন ‘সশস্ত্র বাহিনী’ ক্যাম্পাস ছাড়ছে, তখন তার মধ্যে রয়েছেন বিকাশ প্যাটেল-সহ বেশ কয়েকজন ছাত্র।
শুধু তাই নয়। লাঠি-ডাণ্ডা নিয়ে পরিকল্পিত এই হামলা নিশ্চিত করতে অভিযুক্তরা একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিল বলে খবর। সেই গ্রুপেই গোটা হামলার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হয় বলে দাবি আক্রান্ত পড়ুয়াদের। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের একটা স্ক্রিনশটও প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে বিকাশ, পূজনদের নম্বর-সহ শনাক্ত করা গিয়েছে। ওই গ্রুপে যোগেন্দ্র ভরদ্বাজ নামে সংস্কৃতি বিভাগের এক পড়ুয়াকেও হামলা সম্বন্ধীয় কথোপকথনে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। গ্রুপে ছিলেন, সন্দীপ সিং নামে এক পিএইচডির পড়ুয়াও।
উল্লেখ্য, হামলার পরই যোগেন্দ্র ভরদ্বাজ তাঁর সোশাল মিডিয়া একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর টুইটার একাউন্টের স্ক্রিনশট থেকে তাঁকে শনাক্ত করা গেছে। অন্যদিকে অভিযোগ, জেএনইউ-কাণ্ডে বিশেষ কোড-ওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়েছিল। ওই কোড-ওয়ার্ডই বলে দিচ্ছিল কার ওপর, কীভাবে হামলা করতে হবে। কারা ছাড় পাবেন। জেএনইউর ছাত্র সংসদ সূত্রে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
ওই সূত্রের দাবি, রবিবারের হামলায় যেমন বহিরাগত ছিল, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়াও যুক্ত ছিল। রাতের অন্ধকারের সুযোগে, মুখোশ পরে কোড-ওয়ার্ড ব্যবহার করে তারা এই সুপরিকল্পিত কার্যসিদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ আক্রান্ত পড়ুয়াদের।