বেহাল অর্থনীতি আর অন্ধকার- দুটি বিষয়ই আম জনতার কাছে অনেকটাই দুর্বোধ্য। না বোঝার মতোই। কারণ অন্ধকার আছে সেটা বুঝলেও, ঠিক কতটা অন্ধকার তা নিয়ে মাথাব্যথা ওই বর্ণনাতেই আটকে থাকে, যত ক্ষণ না আমরা সেই ঘোর অন্ধকারে পা হড়কাই। ওই আঘাতই শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে সূচক হয়ে দাঁড়ায় তমসার। অর্থনীতি বেহাল হলেও ব্যাপারটা একই। ধরা যাক নোটবন্দীর কথাই। হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী কালোবাজারি আর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দাবিতে হাজার আর পাঁচশ টাকাকে অচল ঘোষণা করে দিলেন। তখন কেউই বোঝেনি এর কুফল। শুধু লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তোলার ভোগান্তিটাই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এর কুফলটা এখন সকলেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
এই মুহূর্তে যখন বাজারে পেঁয়াজের দাম একশ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে, তখন কিন্তু চাষির ঘরে ঢুকছে কেজি প্রতি আট টাকাই। তা হলে, চাষির ঘরে ঢোকা দাম আর খুচরো বাজারের দামের মধ্যে এই ফারাকের ব্যাখ্যা তো রয়েছে কালোবাজারিতেই! নোটবন্দীতে ছোট ব্যবসা মার খেয়েছে। তা নিয়ে লেখালিখিও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু আজ সকলে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছে যে, কালোবাজারি রোখার লক্ষ্যে যাকে এক পদক্ষেপ বলে দাবি করা হয়েছিল, তা আসলে ছিল পদস্খলন। এই আঁধারের বোধই রান্নাঘরের সঙ্কট হয়ে এখন তামাম দেশবাসীকে ঘাড় ধরে বুঝিয়ে ছাড়ছে!
বছরের প্রথম দিন ভাল থাকলে, গোটা বছর নাকি ভাল যায়।কিন্তু এ বছরের শুরুটাই হল আরও অন্ধকার দিয়ে। গত বছরের শেষ মাসেই জানা গিয়েছিল বাজারে সাধারণ চাহিদা কমেছে। এমনকী দৈনন্দিন বাজারের খরচও মানুষ কমানোর চেষ্টা করছে। সরকার যেখান থেকে পারছে টাকা বার করে নাকি বাজারকে চাগাড় দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। সেবি-র কোষাগারেও হাত দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাজার সাড়া দিচ্ছে না। একই সঙ্গে বছরের প্রথম দিনই সরকার যখন পরিকাঠামো খাতে ১০২ লক্ষ কোটি টাকার খরচের কথা বলছে, তখনই দেখা যাচ্ছে রাজকোষ ঘাটতি (ফিসকাল ডেফিসিট) ইতিমধ্যেই গোটা বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
বাজারকে চাগাড় দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় সুদ কমিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টায় একই সঙ্গে বাজারের সাধারণ চাহিদাও মার খেয়েছে। যাঁরা অবসরের পরে ব্যাঙ্কে রাখা সঞ্চয়ের সুদে খান, আয় কমে যাওয়ায় তাঁরা আতঙ্কিত। অনিশ্চয়তার শিকার হয়ে বাধ্য হচ্ছেন খরচ কমাতে। যাঁরা মাইনে পান, তাঁরাও চারিদিকে অনিশ্চয়তাই দেখছেন। আগামীতে চাকরি গেলে কী হবে, সেই দুশ্চিন্তায় আগে যে ভাবে খরচ করতেন, রাশ টেনেছেন সেই খরচের প্রবণতায়। অর্থাৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতা— সবাই এখন এক অনিশ্চয়তার শিকার। নোটবন্দী থেকে শুরু করে ৩৭০— সরকারের পদক্ষেপে বাজারের সবাই কিন্তু নীতি অনিশ্চয়তাই দেখছে।