লোকসভা নির্বাচনের পরে হিড়িক উঠেছিল রাজনৈতিক দলবদলের। ভোটের ফল দেখে এবং গেরুয়া বাহিনীর হুমকির মুখে বহু নেতা-কর্মী-জনপ্রতিনিধিই যোগদান করেছিলেন বিজেপিতে। কিন্তু কিছুদিন গড়াতেই বিজেপির ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে নিজের নিজের পুরনো দলেই ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে শুধু ভিনদল থেকে আসা কর্মীরাই যে ক্ষুব্ধ, এমনটা নয়। নিজেদের দলের মধ্যেই অসন্তোষ উগড়ে দিচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা। যা কিনা সম্পূর্ণ বেআব্রু করে দিচ্ছে গেরুয়ার গোষ্ঠীকোন্দলকে।
এবার ঘটনাস্থল পূর্বস্থলী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিজেপি–র সভায় গলার উত্তরীয় টেনে হেনস্থা করা হল বর্ধমান পূর্ব লোকসভার সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ ও মণ্ডল সভাপতি অসীম মণ্ডলকে। অভিযুক্ত দলেরই একদল কর্মী–সমর্থক।
পূর্বস্থলী রেল স্টেশন লাগোয়া মাঠে সভা ছিল বিজেপি মনোভাবাপন্ন সংস্থা সর্বভারতীয় হরিনাম সংকীর্তন সমিতির শাখা ‘বর্ধমান শিল্পী সংসদের।’ সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়, রাজীব ভৌমিক, কৃষ্ণ ঘোষ–সহ বিজেপি নেতারা। অভিযোগ, সভা শেষ হতেই নেতারা যখন ফেরার জন্য গাড়িতে উঠছেন, তখনই কৃষ্ণবাবুকে ঘিরে ধরেন একদল কর্মী। আমন্ত্রণ না পাওয়ার ক্ষোভ দেখিয়ে প্রথমে গালিগালাজ করে পরে তেড়ে যান তাঁর দিকে। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। লাল জামা পরা এক যুবক মারমুখী হয়ে ওঠে।
সম্পূর্ণ ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি–র রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিকের কথায় ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগে’ শিলমোহর পড়ে। তিনি বললেন, ‘আসলে যারা নতুন এসেছে, তাঁরা দলের অনেক নিয়মকানুন, নীতি, অবস্থান জানে না। তাই এমন ঘটনা ঘটছে। আমরা দলে আগত প্রত্যেককে দলের নীতি–আদর্শ সম্পর্কে পাঠ দেওয়ার কর্মসূচি নিচ্ছি।’ আর দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে থাকা বহু পুরনো বিজেপি কর্মীর মতে, ‘ইদানিং যা শুরু হয়েছে, তাতে বিজেপির ফল আরও খারাপ হবে।’
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপি–র রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিক। তিনিও ব্যাপক ক্ষোভের মুখে পড়ে যান। পরে তিনি সভা চলাকালীন মঞ্চ ছেড়ে চলে যান বলেও অভিযোগ উঠেছে। রাজীববাবু অবশ্য বলেছেন, ‘সভা চলাকালীন খবর পাই কালনায় কৈলাসজির গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছে। তাই তড়িঘড়ি ছুটে যাই।’ তবে বিষয়টিকে দলীয় নেতৃত্ব যতই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করুক, ঘটনাটিকে ঘিরে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকট হয়ে পড়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অনেকের ধারণা। তাঁদের বক্তব্য, মঙ্গলবারের ঘটনায় পুরনো ও নতুন বিজেপি নেতা–কর্মীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে।