বিভেদের রাজনীতি নিয়ে যখন সরগরম গোটা দেশ, তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই ফিরে এল ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। তাই তো দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে অক্সিজেন নিতে দেখা গেল আবালবৃদ্ধবনিতাকে ক্রিসমাস ইভের পার্ক স্ট্রিটে। আলোয়, হাসির কলরবে সান্তা ক্লজের কাছে যেন শান্তি চাইছে মহানগর। যীশুর জন্মদিন। তাই রাত থেকেই গির্জায় গির্জায় পুন্যার্থীদের ঢল নামল। গোটা দেশজুড়েই একই ছবি ধরা পড়ল। আর ব্র্যাবোর্ন রোডের পর্তুগীজ গির্জায় মানুষের জন্য প্রার্থনায় যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বেঙ্গালুরুর সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ, গোয়ার আওয়ার লেডি অব দ্য ইমাকুলেট কনসেপশন চার্চ, দিল্লীর গোল ডাকখানার স্যাক্রেড হার্ট চার্চ থেকে কলকাতার সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে মানুষের ভিড়। শিশুরা অনেকেই মাথায় লাল–নীল আলো জ্বলা সান্তা টুপি পড়েছিল। পার্ক স্ট্রিটে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি কেকের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সান্তা দাদুকে ঘিরেও শিশুদের উন্মাদনা দেখা যায়। সব শিশুর সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন তিনি। কচিকাঁচাদের কাছে লোকটার ধর্ম তখন আলোর রোশনাইয়ে মিশেছে।
বড়দিনের আগের রাতে যীশু জন্য প্রার্থনা করাই নিয়ম। ক্যারল, কয়ার, স্তোস্ত্রে মুখর হয়ে উঠল অধিকাংশ গির্জা। বেঙ্গালুরুর সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স ক্যাথিড্রালে হাজির হয়েছিলেন বহু মানুষ। সেখানে হয় বিশেষ প্রার্থনা। গোয়ার পঞ্জিমের আওয়ার লেডি অব দ্যা ইমাক্যুলেট চার্চের প্রার্থনা মানুষের ঢল। তিরুঅনন্তপুরমের সেন্ট যোসেফ ক্যাথিড্রালে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা। কলকাতায় সেন্ট পলস ক্যথিড্রালের প্রার্থনায় যোগ দেন বহু মানুষ। সবাই যেন মানুষের জীবনের শান্তি কামনায় ব্যস্ত। মুখে কেউ কিছু না বললেও নাগরিকত্ব আইন নিয়ে জ্বলন্ত দেশটাকে যেন শান্ত করার আর্তি জানাচ্ছে সবাই।
এখানে আর একটা দৃশ্য চোখে পড়ল। বড়দিনের পার্ক স্ট্রিটে এসএফআই-ডিওয়াইএফআইয়ের উদ্যোগে মার্ক্সীয় সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ক বইয়ের স্টল। আগাগোড়া সাজানো ক্রিস্টমাসের তারা, রঙিন রিবনে। ২১ তারিখ থেকে বুধবার পর্যন্ত বই বিক্রির অঙ্ক প্রায় ৩১ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকার। ইংরাজি–বাংলা–হিন্দি–উর্দু ভাষার বই রয়েছে স্টলে। আসলে সবাই শান্তি চায়।