প্রথা মেনে আজ থেকে শান্তিনিকেতনে শুরু হল ১২৫ তম পৌষমেলা। মঙ্গলবার ভোর হতেই শান্তিনিকেতন গৃহ থেকে ভেসে আসে সানাইয়ের সুর। তারপরেই ছাতিমতলায় উপাসনা। ‘মোরে ডাকি লয়ে যাও মুক্ত দ্বারে’ সঙ্গীতে বৈতালিক এবং উপাসনার মধ্যে দিয়ে মেলার সূচনা হয়। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ উপাসনায় অংশ নেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিদ্যুৎকুমার চক্রবর্তী, প্রাক্তন আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর প্রমুখ।
মেলা প্রাঙ্গণে ওয়াচ টাওয়ারের পাশাপাশি বহু সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, এবারও মেলায় দূষণ রোখাই চ্যালেঞ্জ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। তাই মেলা শুরুর পর মাঠে দূষণ নিয়ে ক্ষোভ ছড়ায় কি না সেটাই দেখার। যদিও মেলা চত্বরে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে দূষণ রোধে প্রচারও শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই জমজমাট গোটা শান্তিনিকেতন। পর্যটকদের ভিড়ও শুরু হয়ে গেছে। মেলার মাঠে নানা পসরা নিয়ে বসে পড়েছেন দোকানিরা। প্রথা মেনে হাজির বাউল, কীর্তন, রাইবেশে-সহ অন্য লোকশিল্পীরা।
এবার মেলায় হাজার খানেক স্টল বসেছে। তবে সোমবারও বহু ব্যবসায়ী স্টল পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। মেলা মাঠে বিশ্বভারতীর তরফে করা ক্যাম্প অফিস থেকে ব্যবসায়ীদের শেষ মুহূর্তের স্টল বণ্টনের কাজও হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে এবারও জমজমাট মেলা হতে চলেছে আশাবাদী সবপক্ষই। সোমাবর গিয়ে দেখা যায়, মেলা মাঠে ব্যবসায়ীরা তাঁদের নিজেদের স্টল তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শেষ করেছেন। তবে বহু ব্যবসায়ী পসরা সাজিয়ে বসে যান। এমনকী, পর্যটকের ভিড়ে ঠাসা মেলার মাঠে বিকিকিনিও চলেছে দেদার। বহু মানুষ এদিনই কার্যত মেলা দর্শন করে নিয়েছেন। তবে হস্তশিল্পীদের অনেকেই এদিন তাঁদের সামগ্রী তৈরির কাজ করেন মেলার মাঠে বসেই। পর্যটকরা আসতে শুরু করায় ব্যবসা নিয়ে আশাবাদী প্রত্যেকেই।
গতকাল মেলা মাঠে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলে। মেলার মাঠের অধিকাংশ জায়গা দোকানে জমজমাট হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বেশ কিছু পুরনো স্টল এবার আসেনি। যদিও এদিন পর্যন্ত অনেকেই স্টল তৈরির কাজ করেন। এমনকী, নতুন করে স্টল পাওয়ার জন্যও আবেদন করেছেন। ক্যাম্প অফিসের বাইরে টেবিল পেতে সেইসব ব্যবসায়ীদের জায়গা বণ্টন করা হয়েছে। এবারের পৌষমেলা মাঠ চত্বর নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেলার মাঠে বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় প্রাক্তন সেনাকর্মী ও প্রচুর পুলিস মোতায়েন করা হয়েছে। এদিন থেকেই মেলার মাঠে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেইসব রক্ষীরা নজরদারি শুরু করেছেন। মাঠে অগ্নিনির্বাপণের জন্যও একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মেলায় আসার জন্য পুলিশের তরফে ট্রাফিক ম্যাপও স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এমনকী, পুলিশি সহায়তার জন্য প্রায় বিশেষ বুথ খোলা হয়েছে। মেলা চত্বরের পাশাপাশি বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায় সেই বুথগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
১৮৯৪ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত এই পৌষমেলা হত একদিনের। ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হওয়ার পর পর, ১৯৬১ সাল অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষ পর্যন্ত মেলা হত দু’দিনের। কলেবর বৃদ্ধি হওয়ায় সেই সময় থেকে মেলা পূর্বপল্লির মাঠে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৬১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মূল মেলা ছিল তিন দিনের। পরে ভাঙা মেলা থাকত আরও বেশ কয়েক দিন। ২০১৬ সালে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে তিনদিনের মেলা শেষ হতেই মাঠ খালি করে দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এ বার সেই মেলায় চারদিনের ছাড়পত্র মিলেছে।