এই তো মাস তো আগের কথা। বাংলা, উড়িষ্যার মতো গুটিকয়েক রাজ্য বাদে গোটা দেশেই প্রায় মোদী-ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। লোকসভা ভোটে বিজেপি একা তিনশোর বেশি আসন পেয়ে দ্বিতীয় মোদী সরকার গঠন করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই সেই ফল দেখে মনে করা হয়েছিল, আগামী পাঁচ বছরে বিরোধীরা এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে না। বিজেপি নেতৃত্বও কার্যত ধরেই নিয়েছিলেন, আগামী দিনে একের পর এক রাজ্যের বিধানসভা ভোটেও মোদী-শাহের অশ্বমেধের ঘোড়া আর থামবে না। কিন্তু লোকসভা ভোটের বিপুল জয়ের মাত্র ৫ মাসের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড সর্বত্র বিজেপি খারাপ ফল করছে। সর্বোপরি বিজেপি বিরোধীরা এককাট্টা হলেই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ছে।
তবে গতকাল ঝাড়খণ্ডে যেভাবে বিজেপি সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হয়েছে, তারপর মোদী-শাহের কাছে সব থেকে বড় উদ্বেগ হল, আসন্ন দিল্লী এবং বিহারের ভোট। দিল্লীতে ২০১৫ সালে মোদী জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থাতেই বিজেপিকে গোহারা হারতে হয়েছিল কেজরিওয়ালের কাছে। এবারও কি দিল্লী অধরাই থেকে যাবে? ঝাড়খণ্ডের মতো দিল্লীতেও কি হারতে হবে? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। একইভাবে বিহার নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলিতে আরজেডি-কংগ্রেসের জোট এনডিএকে হারিয়ে একাধিক আসনে জয়ী হয়েছে। ঝাড়খণ্ড বার্তা দিল, মানুষ কেন্দ্রে এখনও মোদীকে সমর্থন করলেও বিস্ময়করভাবে রাজ্যের ভোটে সেই মোদির দলকেই প্রত্যাখ্যান করছে।
আশঙ্কার বিষয়, এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২০ সালে দিল্লী ও বিহারেও বিজেপিকে বড় ধাক্কা খেতে হবে। আর ২০২১ সালে আসাম, বাংলা, তামিলনাড়ু, কেরালায় ভোট। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে তার জেরে ২০২১ সালে কি বাংলা-দখল কার্যত অসম্ভব বিজেপির পক্ষে। তাছাড়া বাংলায় তিনটি আসনের উপনির্বাচন প্রমাণ করেছে তৃণমূল এখনও ভোটব্যাঙ্ক অটুট রেখেছে। অন্যদিকে, আসাম নিয়েও চিন্তা বেড়েছে বিজেপির। আর তামিলনাড়ু ও কেরালাতেও জয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সুতরাং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে ‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত’ নয়, উল্টে ‘বিজেপি মুক্ত ভারত’ হয়ে যেতে পারে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।