মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় বিভাজনের রাজনীতির কোনও স্থান নেই। বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টি সম্পর্কে যাদের কোনও ধারণা নেই তারাই বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি আমদানি করতে চাইছে। বাংলার মানুষ কোনওভাবেই এই বিভাজনের রাজনীতি বরদাস্ত করবে না। তাই কেন্দ্রের জনবিরোধী পদক্ষেপ সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে বাংলায় সব মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাস্তায় নেমেছেন। লাগাতার চলছে প্রতিবাদ, যত সময় গড়াচ্ছে তত জোরালো, তত স্বতঃস্ফূর্ত হচ্ছে এই প্রতিবাদ।
কেন্দ্রের অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত এনআরসি ও সিএএ-র প্রতিবাদে জাতি, ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে রাস্তায় নামলেন বাংলার সাধারণ মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে গতকাল সারা বাংলা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল। মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও তৃণমূল কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে মিছিলে নেমে পায়ে পা, গলায় গলা মেলান আবালবৃদ্ধবনিতা। রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো হাওড়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনায় এদিনের এই স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে।
সকাল থেকেই হুগলির ৪ মহকুমায় রাস্তায় নামে প্রতিবাদী মানুষের ঢল। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ, মন্ত্রী থেকে নেতা–কর্মী সকলেই। চন্দননগর মেরির মাঠ থেকে কেএমডিএ পার্ক পর্যন্ত বিশাল মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি এবং পর্যটন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন। ছিলেন হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না, জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব, মুন্না আগরওয়াল, প্রাক্তন মেয়র রাম চক্রবর্তী প্রমুখ। বেলা ১১টা নাগাদ রীতিমতো ঢাক–ঢোল পিটিয়ে এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী মিছিল শুরু হয় চুঁচুড়া খাদিনা মোড় থেকে। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক চলার পর মিছিল শেষ হয় চুঁচুড়া ঘড়ির মোড় এলাকায়। সেখানে হয় প্রতিবাদ সভা। মিছিল চলাকালীন জেলা সদরের রাস্তা কার্যত জনসমুদ্রের রূপ ধারণ করে। আওয়াজ উঠতে থাকে, ‘নো এনআরসি, নো ক্যা’। মিছিলের নেতৃত্ব দেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী ও জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত, কৃষি, মৎস্য ও অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী অসীমা পাত্র, বিধায়ক অসিত মজুমদার, প্রবীর ঘোষাল, অসীম মাঝি, প্রাক্তন সাংসদ রত্না দে নাগ প্রমুখ।
সোমবার হাওড়া জেলা তৃণমূলের তরফে এনআরসি ও ক্যা–র প্রতিবাদে মহামিছিলে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম। এদিন হাওড়ায় বঙ্কিম সেতুর নীচ থেকে শুরু হয়ে হাওড়া ময়দান, টিকিয়াপাড়া ঘুরে কদমতলায় এসে শেষ হয় ওই মহামিছিল। পুরমন্ত্রী ছাড়াও মিছিলে ছিলেন সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়, ক্রীড়া রাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা, সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া প্রমুখ। মিছিল শেষে ফিরহাদ বলেন, ‘মমতার মতো রাজ্যের মানুষও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁরা কোনওভাবেই এনআরসি ও ক্যা হতে দেবেন না। সমস্ত জেলায় মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন।’ মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম এনআরসি ও সিএএ–র বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এখন সারা দেশে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।’ বিজেপি–র মিছিল প্রসঙ্গে এদিন ফিরহাদ বলেন, ‘মমতার ডাকে জেলায় জেলায় মানুষের যে মিছিল হয়েছে তার তুলনায় বিজেপি–র এদিনের মিছিল খুবই নগণ্য।’
দুপুরে কয়েক হাজার মানুষকে নিয়ে বিজেপির স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত এনআরসি ও সিএএ-র প্রতিবাদে ব্যারাকপুরে একটি বিশাল মিছিল বের করে তৃণমূল। নেতৃত্বে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দমদমের সাংসদ সৌগত রায়। মিছিলটি ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে শুরু হয়ে চিড়িয়া মোড় ঘুরে বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে ফের ব্যারাকপুর স্টেশনে ফিরে শেষ হয়। সেখানে আয়োজিত জনসভায় সাংসদ বলেন, ‘দেশের মানুষ যে এনআরসি বা ক্যা চাইছেন না তা আরও একবার প্রমাণিত হল ঝাড়খণ্ডে বিজেপির হারের মধ্য দিয়ে। এখানে বিজেপি একটা বড়সড় ধাক্কা খেল। কলকাতায় বিজেপির মিছিলও ফ্লপ হয়েছে। এনআরসি নিয়ে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ দু’জনে দু’রকম কথা বলছেন। বোঝা যাচ্ছে না কে ঠিক বলছেন। যে যাই বলুক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে ঠিক আজ তা প্রমাণিত।’ ওদিকে, শাঁখ বাজিয়ে এনআরসি ও ক্যা–র বিরুদ্ধে সোমবার বারাসতে তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিলের সূচনা করলেন সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
প্রতিবাদ মিছিল হয় শ্রীরামপুর মহকুমাতেও। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চাঁপদানির পলতাঘাট থেকে মিছিল শুরু হয়ে শেষ হয় শ্রীরামপুর বটতলা এলাকায়। ক্যা–র বিরোধিতা করা নিয়ে রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে আইনজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলা প্রসঙ্গে তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি বলেন, ‘মোদি আগে আইনটা জানুন। ১৪ নম্বর ধারা অমান্য করা হয়েছে। যেমন মোদি, তেমন তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তেমন তাঁর আইনমন্ত্রী, তেমন তাঁর আইনি পরামর্শদাতা।’ এদিন ঝাড়খণ্ড নির্বাচন প্রসঙ্গে উচ্ছ্বসিত সাংসদ বলেন, ‘ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সরকার করতে পারছে না এতে আমরা খুশি।’