গেরুয়া শিবিরের লোকজনের যেন আবদারের শেষ নেই। কখনও কোনও কিছুই যেন তাঁদের মনমত হয় না। তবে এবার বিজেপি নেত্রী যেন সীমা ছাড়ালেন সব কিছুর। সরকারি অফিসে নিজের ঘরে চাইলেন নিজের পছন্দের গেরুয়া রঙ। আর তা না পাওয়াতে কাজেই আসছেন না তিনি। বিজেপি নেত্রী দেবস্মিতা চক্রবর্তীর এহেন খামখেয়ালিপনায় স্তম্ভিত সকলে।
বিরোধী দলনেত্রীর ঘর কোনটা হবে, তা নিয়ে এর আগেই বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। প্রথমে ঘর দেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি সভাধিপতির কাছে অভিযোগ করেন। পরে ঘরের ব্যবস্থা হলেও দেবস্মিতা অভিযোগ করেন, যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা নেহাতই ছোট। তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি সভাধিপতিকে চিঠিও দেন। পরে তাঁর জন্য অপেক্ষাকৃত বড় একটি ঘর বাছা হয়। প্রথমে ঘরের রং করা হয় সবুজ। কিন্তু সেই রং দেবস্মিতার নাপসন্দ, তিনি গেরুয়া রং করতে বলেন।
কিন্তু জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূলের রিক্তা কুণ্ডু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এটা সরকারি অফিস, তা কোনও ঘরের রঙ কারোর পছন্দমত করা সম্ভব নয়। কিন্তু সরকারি নির্দেশের পরেও নিজের জেদে অনড় থাকেন দেবস্মিতা। বরং পালটা যুক্তি দেন যে ঘরটি ব্যবহার করবে, দেওয়ালে তার পছন্দের রং থাকাটাই বাঞ্ছনীয় নয় কি?’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি পাল্টা বক্তব্য, “এটা মনে রাখা উচিত যে আমরা সকলেই জনপ্রতিনিধি। কোনও দলের প্রতিনিধি নই। এটা প্রশাসনিক দফতর, কারও পার্টি অফিস নয় যে দলের রং ব্যবহার করা হবে।” নিজের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “এখানে তো আমার বা কর্মাধ্যক্ষদের ঘরে তৃণমূলের রং করা হয়নি। এমনকি নীল-সাদাও করা হয়নি। আমাদের আগে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরাও এটা করেননি। আশা করি, আগামী দিনে যাঁরা আসবেন, তাঁরাও এমনটা করবেন না।”
কিন্তু না নিজের অবান্তর জেদ বা দাবি পূরণ না হওয়ার জন্যে তিনি ওই ঘরে পা দিচ্ছেন না। তা হলে সাধারণ মানুষ তাঁর সঙ্গে কোথায় দেখা করবেন? এ প্রশ্নের কোনও সদুত্তর তিনি দেননি। আপাতত এই রঙের রাজনীতি নিয়ে জেলা পরিষদের আনাচেকানাচে নানা গুঞ্জন চলছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ঘর রং করতে প্রতি বার প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। জনগণের টাকা এ ভাবে অপচয় করা জনপ্রতিনিধিদের কতটা মানায়, সেই প্রশ্ন উঠছে। রং নিয়ে জনপ্রতিনিধির যতটা মাথাব্যথা, তাতে মানুষকে পরিষেবা দেওয়াটা যে গৌণ হয়ে যাচ্ছে, উঠছে সেই কথাও। এক কর্মীর কটাক্ষ, “মানুষ নানা সমস্যা নিয়ে বিরোধী দলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করবে বলেই তো তাঁকে ঘর দেওয়া হয়। সেখানে তিনি না বসলে মানুয তাঁকে কোথায় পাবে?”