নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে কোনও একটি রাজনৈতিক দলকে স্থায়ী সরকার গঠনের সুযোগ করে দেন দেশবাসী। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, সেটাই সংখ্যাগুরু জনতার মত। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর স্মরণে সোমবার ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক বক্তৃতায় এই মন্তব্য করে পরোক্ষে মোদী সরকারকে বিঁধলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশজোড়া বিক্ষোভ, অশান্তির মাঝেই মনে করিয়ে দিলেন, বহুত্ববাদের ভারসাম্যই গণতন্ত্রের ভিত্তি।
গতকাল বাজপেয়ী স্মারক বক্তৃতায় প্রণব বলেন, ‘নির্বাচনে অঙ্কের হিসাবে গরিষ্ঠতা কোনও দলকে স্থায়ী, স্থিতিশীল গড়ার অধিকার দেয়। কিন্তু জনপ্রিয় গরিষ্ঠতার অভাব আধিপত্যবাদী সরকার গড়ার অধিকার ও ক্ষমতা দেয় না। এটাই আমাদের দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের বার্তা এবং নির্যাস।’ সেইসঙ্গে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ১৯৫২ থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দেশে ক্ষমতায় এলেও কখনও কোনও দলই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সর্বদাই নির্বাচিত সরকারের বিপক্ষেই থেকেছে।
প্রয়াত বাজপেয়ীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রণব বলেন, ‘এই দেশকে তিনি জানতেন। ভারতবাসী দীর্ঘ সময় ধরে কোনও পরমত-অসহিষ্ণুতা এবং বিভাজনকে ভেতর থেকে মেনে নেয় না। এই দেশের আয়তন ১২,৬৯,২১৯ বর্গমাইল, ৭টি বড় ধর্মের চর্চা হয় এখানে, ১২২টি ভাষা এবং ১৬০০ উপভাষায় মানুষ কথা বলে...। অটলজি এই বাস্তবতা মেনে নিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন, যাতে তাঁর আদর্শের প্রতি সায় না থাকলেও সবাইকে নিয়ে চলা যায়।’ স্পষ্টতই এই বার্তা সরকার ও বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি।
সোমবারের বক্তৃতায় কেন্দ্রকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বার্তা, যত ভোটার, সেই অনুপাতে জনপ্রতিনিধি নেই। তাই লোকসভার আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ১,০০০ করা হোক। একইভাবে রাজ্যসভায় আসন বাড়ানোর কথা বলেছেন তিনি। বর্তমানে লোকসভায় ৫৪৩টি এবং রাজ্যসভায় ২৪৫টি আসন রয়েছে। তাঁর যুক্তি, ১৯৭৭ সালে শেষ দফায় লোকসভার আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। যার ভিত্তি ছিল ১৯৭১ সালের জনগণনা। তখন দেশের জনসংখ্যা ছিল ৫৫ কোটি। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। অথচ আসন ৪২ বছরে বাড়েনি। প্রণবের কথায়, জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণের বেশি। সেজন্য আসন সংখ্যা অন্তত ১,০০০ হওয়া দরকার।