তাঁর মৃত্যুর পরই বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ প্রণয়ন করতে পারবে বিজেপি। সোমবার সিএএ–র বিরোধিতায় প্রতিবাদ মিছিল শেষে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই ভাষাতেই কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কড়া বার্তা, ‘যতক্ষণ ক্যাব আর এনআরসি প্রত্যাহার না করা হবে আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব। রাস্তাই আমাদের রাস্তা দেখাবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করব। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করব। যতদিন আমি বেঁচে আছি, আমরা এনআরসি, ক্যাব জারি করতে দেব না। ওরা আমাদের সরকার ফেলে দিতে পারে, কিন্তু আমরা আত্মসমর্পণ করব না। বাংলায় ওদের এই আইন জারি করতে হলে তা আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে।’
বিভেদের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই চলবে বলে জানিয়ে বিজেপি উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , ‘এই লড়াই কোনও একটা ধর্মের লড়াই নয়। এটা সংস্কৃতি, মানুষ, সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের লড়াই। একটা সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণ ধর্মের আমদানি করে দেশটাকে ভেঙে দিচ্ছে ওরা। তলায় তলায় বিভেদ তৈরি করছে। বিজেপির দালালদের আমি ক্ষমা করি না।’ তিনি এদিন ফের রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করি না। ধর্ম যার যার। এই দেশে, এই বাংলা সবার। আমরা সাহায্য করি। ভাগাভাগি করি না।’ অন্যান্য রাজ্যগুলিও যে এনআরসি-র বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছে সেকথা মনে করিয়ে মমতা বলেন, ‘যখন আমরা এনআরসি-র বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলাম তখন আমরা একা ছিলাম। এখন অন্য মুখ্যমন্ত্রীরাও মুখ খুলেছেন। আমি ওনাদের ক্যাবের বিরোধিতার জন্যও আবেদন জানাব।বিজেপিকে তুলোধনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এসে ভাবে দেশে শুধু তারাই থাকবে।’
এদিনও বিক্ষোভকারীদের হিংসাত্মক আন্দোলনের পথ থেকে সরে এসে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের আবেদন করে মমতা বলেছেন, ‘ট্রেন, পোস্ট-অফিসে কেউ আগুন দেবেন না। পথ অবরোধ করবেন না। যে সব মানুষরা আপনাদের সমর্থন করছে তাদের বিরোধিতা করছেন কেন?’ এই হিংসার ফলে বিজেপির সুবিধা হবে বলে মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘কয়েকটা ট্রেনে আগুন লেগেছে বলে বিজেপি সব ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে।’ এজন্য রাজ্যবাসীরা মুশকিলে পড়েছেন, বললেন তিনি। নাম না করে প্রদেশ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনা করে মমতা বলেন, তাঁরা রাষ্ট্রপতি শাসন চাইছেন রাজ্যে। কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছে। কিন্তু রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজ্য পুলিসই যথেষ্ট দক্ষ বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘আগে আসাম সামলাক তারপর বাংলা সামলাবে।’
সোমবার দুপুরে সিএএ–র প্রতিবাদে রেড রোডে সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে মিছিল শেষ হয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। তৃণমূল কর্মী, সমর্থকরা ছাড়াও মমতার সঙ্গে পা মেলান কয়েক লক্ষ সাধারণ মানুষ, সমাজকর্মী এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা। সিএএ–র প্রতিবাদে মঙ্গলবার যাদবপুর এইট–বি বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ কলকাতা এবং বুধবার হাওড়ায় মিছিল হবে বলে এদিন ঘোষণা করে দেন মমতা।