২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে যে ‘প্রতিশ্রুতি’গুলি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘উজ্জ্বলা যোজনা’। তিনি দাবি করেছিলেন, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য দেশের সব মানুষের কাছে রান্নার গ্যাসের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। তবে মোদী বলেছেন এক, হয়েছে আরেক। প্রায় ২.৬১ লক্ষ গরিব পরিবার একই দিনে দু’টি রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছেন। ১৩০০ জনকে দেখা গিয়েছে এক দিনে ১২টি সিলিন্ডার কিনতে। ৭০০০ পরিবার এক দিনে ৪টি কিনেছেন। এক দিনে ৫টি কিনেছেন প্রায় ৫০০০ পরিবার। আর সবক’টি কেনা হয়েছে ভর্তুকিতে পাওয়া দামে! প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার রান্নার গ্যাস কেনা নিয়ে এই তথ্য তুলে কার্যত কেন্দ্রীয় প্রকল্পটিতে বড় মাপের কেলেঙ্কারির ইঙ্গিত দিল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (ক্যাগ) রিপোর্ট।
প্রসঙ্গত, দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছক দূষণহীন জ্বালানি— এই ডাক দিয়েই ২০১৬ সালের ১ মে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা এনেছিল কেন্দ্র। উদ্দেশ্য ছিল, দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলিতে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়া। সে জন্য ভাল রোজগেরেদের সিলিন্ডারে ভর্তুকি ছাড়ার জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সাশ্রয়ের ওই টাকায় গরিবদের সিলিন্ডার দেওয়া হবে। তবে হয়েছে হিতের বিপরীত। ক্যাগ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইন্ডিয়ান অয়েল ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম ২.৯৮ লক্ষ গরিব পরিবারকে একই দিনে ২ থেকে ২০টি সিলিন্ডার বিক্রি করেছে। তাদের প্রশ্ন, দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারগুলি এত সিলিন্ডার কিনে কী করেছে? ক্যাগ বলেছে, সাধারণ গৃহস্থ পরিবারেও একসঙ্গে এতগুলি কেনা অস্বাভাবিক। তাই উজ্জ্বলা নিয়ে তদন্ত করুক সরকার।
এতেই কেলেঙ্কারির আঁচ পাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, গরিব পরিবারগুলি আসলে বিয়েবাড়ির ক্যাটারার বা হোটেল-রেস্তোরাঁয় সিলিন্ডার বেচে দিচ্ছেন। কারণ, ভর্তুকিপ্রাপ্ত সিলিন্ডার ও ভর্তুকি ছাড়া সিলিন্ডারের দামের যথেষ্ট ফারাক। আবার গৃহস্থ পরিবারের জন্য সিলিন্ডারের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত সিলিন্ডারের দামেও ফারাক বিস্তর। উজ্জ্বলায় গ্যাসের দাম পড়ে প্রায় ৫০০ টাকা। সংশ্লিষ্ট ওই মহলের আশঙ্কা, তাই হয়তো উজ্জ্বলায় তা কিনে বেশি দামে বেচে দেওয়া হচ্ছে। ক্যাগ রিপোর্টে এ কথাও বলা হয়েছে, ৩.১৮ কোটি গরিব পরিবারের ৫৬ লক্ষ এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সিলিন্ডার কিনতে যাননি। ১.০৫ কোটি আড়াই বছরে খুব বেশি হলে তিনটি কিনেছেন। এর থেকেই স্পষ্ট, মোদীর এই প্রকল্প সার্বিক ভাবেই ব্যর্থ। কারণ গরিব পরিবারগুলি নিখরচায় প্রথম সিলিন্ডার পাওয়ার পরে আর তা কিনছেন না। কাঠকয়লার উনুন বা কাঠকুটো জ্বালিয়েই রান্না করছেন।