বিপুল জনমত নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেই দেশ জুড়ে গৈরিকিকরণে উঠেপড়ে লেগেছে মোদী সরকার। একদিকে যেমন দেশের সর্বত্রই হিন্দি ভাষা ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করছে শাসক শিবির। তেমনি ভিনধর্মীদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলতেও বাধ্য করা হচ্ছে। এছাড়া দেশ থেকে মুসলিম শরণার্থীদের বিতাড়নের উদ্দেশ্যে ক্যাব তো রয়েছেই। এসব থেকেই স্পষ্ট, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান— সঙ্ঘ পরিবারের এই ঘোষিত নীতিকে বাস্তবায়িত করতে এখন জল মাপছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। এবার তা আরও স্পষ্ট হল খোদ এক বিজেপি সাংসদের মন্তব্যেই।
গতকাল সকালে মোদী মন্ত্রীসভা যখন সবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুমোদন করেছে, তখন সংসদ চত্বরে বিজেপি সাংসদদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। একের পর এক বিজেপি সাংসদ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ইসলামি দেশ। ভারতেরও নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতির পরিচয় থাকা উচিত।’ সে কারণেই কি শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের বিল আসছে? ‘না, না, তা কেন? ভারত তো ধর্মনিরপেক্ষ দেশ’—এমনই যুক্তি দিচ্ছিলেন নেতারা। কিন্তু মনের কথা বলে ফেললেন গোরক্ষপুরের বিজেপি সাংসদ।
যোগী আদিত্যনাথের কেন্দ্র থেকে সাংসদ হওয়া রবি কিষণের মতে, ‘এ দেশে ১০০ কোটি হিন্দু। ভারত তাই হিন্দু রাষ্ট্র। বিশ্বে অনেক ইসলামি ও খ্রিস্টান দেশ আছে। ফলে ভারতেরও নিজস্ব পরিচয় দরকার।’ বিরোধীরা তখন বলছেন, বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করতে চাইছে। আর বিজেপির সাংসদ রমেশ বিধুরি জবাব দিচ্ছেন, ‘যাঁরা এই বিলের বিরোধিতা করবেন, তাঁদের মুখোশ খুলে যাবে। অনুপ্রবেশকারীদের দেশে রেখে কারা উন্নয়ন রুখতে চায়, স্পষ্ট হবে।’ তাই বলে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন? বিজেপি সাংসদের মত, ‘গান্ধীর আদর্শে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রেখে।’
যদিও আরএসএসের ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ তৈরির পথেই যে হাঁটছেন মোদী-শাহ, বিরোধীদের তা নিয়ে সংশয় নেই। সূত্রের খবর, বিজেপি সাংসদদের সদ্যই শেখানো হয়েছে, নাগরিকত্ব বিল কী লক্ষ্যে আনা হচ্ছে। সেখানে দলের নেতা বা অধিকাংশ সাংসদ এই বার্তা পেয়েছেন, সঙ্ঘের ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ পথেই হাঁটছে বিজেপি। এ দেশের সব নাগরিককেই ‘হিন্দু’ বলে মনে করে সঙ্ঘ। কেউ যদি নিজেকে ‘হিন্দু নন’ বলে মনে করেন, তাঁদেরও ‘হিন্দু’ বলেই মনে করে সঙ্ঘ। উল্লেখ্য, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও অক্টোবরের গোড়াতেই বলেছিলেন, ‘ভারত হিন্দুরাষ্ট্র। যত ক্ষণ এক জনও ভারতকে মাতৃভূমি এবং নিজেকে হিন্দু বলে মনে করবেন, এই দেশ হিন্দুরাষ্ট্র থাকবে।’