আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার বুলি আউড়িয়ে দেশবাসীকে যে স্বপ্নের ফানুসে চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এক বছর পেরনোর আগেই তা ফুটো হয়ে গিয়েছে। দেশে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছে ৪.৫ শতাংশে। যা গত ৬ বছরে সর্বনিম্ন। তবে এই নিয়ে দেশ যখন সরগরম, তখন সংস্কারের বার্তা দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সোমবার সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন কর্পোরেট কর ছাঁটার সুবাদে ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং হাব (কল-কারখানায় উৎপাদনের কেন্দ্র) হবে।
আর মঙ্গলবার ভারত-সুইডেন বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে জানালেন, লগ্নীর আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে কেন্দ্র আরও একগুচ্ছ সংস্কার আনতে দায়বদ্ধ। তবে অর্থমন্ত্রী এভাবে লগ্নীর ডাক দিলেও, গতকালই ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাসে ফের চলল কাঁচি। এবার উপদেষ্টা সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্সের। চলতি অর্থবর্ষে তার হার কমে ৫.৩ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিল তারা। হালে যে পথে হেঁটেছে অনেকেই। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, লগ্নী টানতে মরিয়া সরকার যতই সংস্কারের বার্তা দিক, একের পর এক সংস্থার বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই তাতে কার্যত জল ঢালছে। কারণ, লগ্নীকারীদের কাছে তা অর্থনীতির ঝিমুনি না কাটারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রাজকোষ ঘাটতি বেলাগাম হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে গোল্ডম্যান। তার ওপরে মূল্যায়ন সংস্থা ফিচ রেটিং-ও ভারতের ব্যাঙ্কগুলি সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছে নেতিবাচক-ই। দাবি করেছে, শ্লথ অর্থনীতি আর্থিক ভাবে দুর্বল ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা আরও বাড়াতে পারে। ঋণ দেওয়া বাড়াতে হলে ২০২০-২১ সালের মধ্যে বাড়তি প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পুঁজি লাগবে তাদের।
অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে মুডিজের আবার দাবি, দেশে ইস্পাতের চাহিদা কমবে গাড়ি শিল্পে ও কারখানায় উৎপাদন কমায়। পাশাপাশি, সংসদে খোদ সরকার বলেছে, অক্টোবরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১২ শতাংশ কমেছে। মূলত কৃষি ও বাণিজ্যে কর্মকাণ্ড ধাক্কা খাওয়াতেই। মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিল জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এই আর্থিক বছরে ভারতে বৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৫.১ শতাংশে, যেখানে তাদের আগের পূর্বাভাস ছিল ৬.৩ শতাংশ। এর পাশাপাশি, অর্থনীতির ঢিমে গতি বহাল থাকার দুঃসংবাদ শুনিয়েছে উপদেষ্টা সংস্থা ডান অ্যান্ড ব্রডস্ট্রিটও।