চেন্নাই: ১৯৭৪ সালে অবিবেচকের মতো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় ভূখণ্ড শ্রীলঙ্কাকে উপহার দিয়েছিলেন। গত লোকসভা ভোটে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কৌশলগত দিকে জরুরি এই কাচ্চাতিভু দ্বীপটি। তবে এ নিয়ে অভিযোগ তুললেও বাস্তবে কোনও পদক্ষেপই নেয়নি মোদী সরকার। এবার কাচ্চাতিভু ফেরানোর দাবি নিয়ে সরব হলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন।
মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুধু ভোটের জন্য কাচ্চাতিভু ইস্যু তুলেছিলেন। তামিল মৎস্যজীবীদের জন্য তিনি কিছুই করবেন না। তাঁর বক্তব্য, গত ১০ বছরে মোদি সরকার কাচ্চাতিভু ফেরানোর জন্য বা তামিল মৎস্যজীবীদের জন্য কিছুই করেননি। এই মর্মে তিনি দাবি তুলেছেন, কাচ্চাতিভু ফেরাতে সরাসরি পদক্ষেপ করুক মোদী সরকার।
স্ট্যালিনের দাবি, ইতিমধ্যেই কাচ্চাতিভু ফেরতের দাবিতে তামিলনাড়ু বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এই ইস্যুতে দরবার করেছেন তিনি। কিন্তু মোদি কোনও পদক্ষেপ করছেন না।
বিগত লোকসভা ভোটের সময়ে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় ভূখণ্ড শ্রীলঙ্কাকে উপহার দিয়েছিলেন। ১৯৭৪ এর এই কাজ আদতে অবিবেচকের মতো। এই দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অস্ত্রে শান দেন ভোটের আগে। কিন্তু এরপর কোনও পদক্ষেপই হয়নি।
তবে প্রধানমন্ত্রী গত লোকসভা ভোটের সময়ে দাবি করেন, যদিও কাচ্চাতিভু-তে ১৯৭৪ এর সময়ে কেউ বাস করতেন না, কিন্তু কৌশলগত দিক থেকে এই দ্বীপটি ভীষণ জরুরি। বিশেষত ভারতীয় মৎস্যজীবীরা বহুবার এই দ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এর পর থেকেই দাবি উঠছে, ১৯৭৪ সালের ওই চুক্তি পালটে ফেলা হোক। ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হোক ভূখণ্ড। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ওই দ্বীপ ভারতের হাতে ফেরাতে নারাজ। উলটে ওই এলাকায় কোনও মৎস্যজীবী মাছ ধরতে গেলে তাঁদের আটক করছে শ্রীলঙ্কার প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, গত ২০ বছরে ৬ হাজার ১৮৪ ভারতীয় মৎস্যজীবী শ্রীলঙ্কায় আটক হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ১ হাজার ১৭৫ ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা বাজেয়াপ্ত করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার। কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কার এক মন্ত্রী দাবি করেন, মাঝে মাঝেই ভারতীয় মৎস্যজীবীরা শ্রীলঙ্কার জলসীমায় অনধিকার প্রবেশ করছেন।
শ্রীলঙ্কার মন্ত্রীর এই মন্তব্যে আরও ক্ষুব্ধ হন স্ট্যালিন। তিনি বলেন, “ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের উচিত ছিল শ্রীলঙ্কার মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের যোগ্য জবাব দেওয়া।” স্ট্যালিন আরও বলেন, “একমাত্র সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই কাচ্চাতিভু এবং তামিল মৎস্যজীবীদের সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু মোদি সরকার গত ১০ বছরে কিছুই করেনি।”
উল্লেখ্য, আসলে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কাচ্চাতিভুকে ইস্যু হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন স্ট্যালিন। ২০২৪ সালে যে কাচ্চাতিভুকে হাতিয়ার করতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, সেটাকেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চলেছে ডিএমকে।