কলকাতা : গত কয়েকমাস ধরেই দেশের একাধিক বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নেমে আসছে অকথ্য অত্যাচার। কখনও মারধর, কখনও তাঁদের উপর হামলা, লুটপাট, উপার্জন কেড়ে নেওয়া, কখনও আবার পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে। এহেন হেনস্থার ঘটনায় এবার উদ্বিগ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। বাংলায় কথা বললে কেন বের করে দেওয়া হচ্ছে, বুধবার সে প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রের জবাব তলব করলেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। আগামী ২৩ জুলাই, দুপুর দু’টোয় মামলার পরবর্তী শুনানি।
এদিন হাইকোর্টে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বেগপ্রকাশ করে বলেন, “দিল্লির ঘটনা ভয়ংকর। আমরা তদন্ত করে দেখেছি। ওঁরা এখানে থাকত। আমাদের স্বরাষ্ট্রসচিব এবিষয়ে চিঠি দিয়েছেন।” অবশ্য দিল্লি পুলিশের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, “ওরা স্বীকার করেছে তারা এদেশের নাগরিক নয়। যদি বাংলাদেশে যান তাহলে কীভাবে হেবিয়াস কর্পাস মামলা? দিল্লি আদালতে এই পরিবার আলাদা মামলা করেছে। সে কথা গোপন করেছে, শুধু এই কারণে মামলা খারিজ হওয়া দরকার। এখানে কেউ জন্ম নিলেই সে এদেশের নাগরিক বলে গণ্য হয় না। পহেলগাঁও হামলা ও বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের পর এমন বহু মানুষকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বহু মানুষকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।”
সওয়াল জবাব শোনার পর বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর প্রশ্ন, “গোটা দেশ জুড়ে একই সময়ে কেন দেশের বাইরে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হল? এই অভিযোগ কেন, বাংলায় কথা বললেই তাদের বের করে দেওয়া হচ্ছে? এটা খোঁজ নিন। আমরা সমাধান খুঁজতে চাই।” আগামী ২৩ জুলাই কেন্দ্রের জবাব তলব করেছেন বিচারপতি।
উল্লেখ্য, বুধবার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার প্রতিবাদে কলেজ স্ক্যোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া বার্তা দেন কেন্দ্রকে। “আমি ঠিক করেছি, আরও বেশি বাংলায় কথা বলব। ক্ষমতা থাকলে আমাকেও ডিটেনশন শিবিরে রাখুন। অসমে ১২ লক্ষ বাঙালি বাদ দিয়েছেন। রাজবংশীরা হিন্দু না মুসলিম? এই বিজেপি-র দালাল, লজ্জা করে না! নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোটার বাদ দিয়ে দিচ্ছে। বলছে ২০০২ সালের তালিকা দেখবে। কত লোক তো মারা গিয়েছেন! কত নতুন লোক এসেছেন, কত বাচ্চা জন্মেছে। কে কী পরবে, কে কী খাবে, কে কোথায় থাকবে, কে কোন ভাষায় কথা বলবে, তা ওরা ঠিক করবে!”, সাফ জানান মুখ্যমন্ত্রী।