কলকাতা: মাস খানেক আগেই বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটেয় ভাঙচুর করেছিল দুষ্কৃতীরা। এবার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িও ভাঙার মুখে। খবর পেতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। এবার মুখ্যমন্ত্রীর পরে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভাঙায় গর্জে উঠলেন তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশে ইউনুস সরকারের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে জানান, ঐতিহ্যশালী এই বাড়ি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া বাঙালির ঐতিহ্যের উপর আঘাত। বাঙালির আবেগে আঘাত। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে অভিষেক লেখেন, ‘অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাসভবনটি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভেঙে ফেলছে। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ এই বাড়িটিকে ভেঙে ফেলা আমাদের ঐতিহ্যের উপর আক্রমণের চেয়ে কম কিছু নয়। বাঙালিদের বিবেকের উপর আঘাতও বটে। শিল্পক্ষেত্রে রায় পরিবারের অবদানকেও অবজ্ঞা করা হচ্ছে।’ ভারত সরকারকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিষেক।
বাংলাদেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাড়িটি ১০০ বছরের বেশি পুরনো। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাড়িটি বাংলাদেশের সরকারের হাতে আসে। অন্তবর্তীকালীন প্রশাসন সূত্রে খবর বিগত ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাড়িটি যেকোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ে বিপদ ঘটতে পারে। এর জায়গায় সেমি-কংক্রিটের একটি বিল্ডিং তৈরি করা হবে বলে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই খবর সামনে আসতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় হরিকিশোর রায় চৌধুরী রোডে অবস্থিত সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি। এটি সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা তথা সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়ি ছিল। এই বাড়িটি বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। তবে ইউনূস সরকার বর্তমানে এই বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করেছে।
এরপরই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের শশীলজ জাদুঘরের মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বাড়িটি ভাঙা সম্পর্কে তথ্য চেয়ে জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিষয়টি সামনে এনে এক্সে পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিক।’এরপরই নড়েচড়ে বসে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভাঙা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় ভারত সরকার। ইউনুস সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হল, বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতি-বিনোদন জগতের এ হেন পীঠস্থানকে রক্ষা না করা হলে সেটা ভালোভাবে নেবে না ভারত সরকার।