প্রতিবেদন : চলতি মরসুমে কার্যত অপ্রতিরোধ্য ছিল তারা। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের বড় অংশও বাজি ধরেছিলেন পিএসজির উপর। লিগ ১, ফ্রেঞ্চ কাপ, ফ্রেঞ্চ সুপার কাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ খেতাব থেকে মাত্র এক কদম দূরে ছিল লুইস এনরিকের দল। কিন্তু কথায় আছে, ফাইনাল ফেভারিট বলে কিছুই হয় না! আর সেই প্রবাদই মোক্ষমভাবে টের পেল পিএসজি। ফাইনালে তাদের নাস্তানাবুদ করে চ্যাম্পিয়ন হল চেলসি। খেলার ফল ৩-০। জোড়া গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করে জয়ের নায়ক কোল পামার।
ফাইনালের মহাযুদ্ধের বহু আগে থেকেই নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার ভিড় জমিয়েছিলেন পিএসজি সমর্থকরা। সেমিফাইনালে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে জয় স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল তাদের। চলছিল উৎসবের প্রস্তুতিও। কিন্তু ম্যাচ শেষে সঙ্গী হল হতাশাই। দুরন্ত ফর্মে থাকা ‘লেস প্যারিসিয়েন্স’দের চমকে দিল এনজো মারেস্কার প্রশিক্ষণাধীন তরুণ ব্রিগেড।
রবিবার ম্যাচের শুরু থেকেই প্রেসিং ফুটবল খেলছিল চেলসি। ৮ মিনিটে হোয়াও পেদ্রোর বুদ্ধিদীপ্ত ফ্লিকে বক্সের ভিতর বল পান কোল পামার। মাটি ঘেঁষা শটে বল পিএসজির জালে জড়াতে ভুল করেননি তিনি। শুরুতেই গোল খেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে পিএসজি। প্রথম গোলের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই ৩০ মিনিটে চেলসির ব্যবধান বাড়ান পামার। বক্সের মধ্যে বাঁ-পায়ের শটে ফের পিএসজির গোলরক্ষক দোন্নারুমাকে পরাস্ত করেন তিনি। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে, ৪৩ মিনিটে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় লন্ডনের ক্লাব। পামারের বাড়ানো পাস থেকে ‘চিপ’ শটে বল গোলে পাঠান ব্রাজিলের তরুণ তুর্কি হোয়াও পেদ্রো।
এরপর দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার মরিয়া চেষ্টা চালায় পিএসজি। তবে চেলসির ডিফেন্সে বারবার আটকে যায় তাদের আক্রমণ। ভূয়সী প্রশংসা প্রাপ্য চেলসির গোলরক্ষক রবার্ট সানচেজের। ৪৭ মিনিটে জর্জিয় তারকা খভিচা কাভারাটস্খেলিয়ার জোরালো শট রুখে দেন সানচেজ। ৫২ মিনিটে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন ডেম্বেলে। সেই গোলও বাঁচান তিনি। এর ছ’মিনিট পরই ভিতিনহার আগুনে শট প্রতিহত করেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে এভাবেই গোলে কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে চেলসির জয় নিশ্চিত করেন সানচেজ।
স্বাভাবিকভাবেই গোল না পেয়ে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছিল পিএসজি। ৮৫ মিনিটে চেলসির স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়াকে চুল ধরে ফেলে দেন জোয়াও নেভেস। তাঁকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। বাকি সময় ১০ জনে খেলতে হয় পিএসজি’কে। ম্যাচের একেবারে অন্তিমে গঞ্জালো রামোস পিএসজি’র হয়ে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেলেও তা নষ্ট করেন। ৬৭ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখেছিল পিএসজি। কিন্তু একবারও গোলের মুখ খুলতে পারল না তাঁরা।
ম্যাচ ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে কোল পামারকে। ইংরেজ তারকা ফুটবলার জানান, “অসাধারণ একটা অনুভূতি। ম্যাচের আগে তো আমাদের দল নিয়ে অনেকেই সংশয়ে ছিলেন। যেভাবে লড়াই করেছি আমরা, তা এককথায় দুর্দান্ত।” খুশি চেলসি কোচ এনজো মারেস্কাও। “আমার মনে হয়, প্রথম ১০ মিনিটেই ম্যাচটা আমরা জিতে নিয়েছি। কঠিন আবহে ছেলেরা দারুণ ফুটবল উপহার দিয়েছে। এই জয়ের ভাগিদার সবাই। স্মরণীয় মুহূর্ত। আনন্দ বোঝানোর মতো কোনও শব্দ নেই”, জানান তিনি।