নয়াদিল্লি : ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বারবার ‘আত্মনির্ভর’ ও ‘স্বচ্ছ’ ভারতের বাজখাঁই বুলি শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে। কিন্তু আদৌ কতটা স্বচ্ছ ও আত্মনির্ভর হয়েছে দেশ? বাস্তব চিত্রটা পুরোই বিপরীত। মোদী-জমানায় দুর্নীতির জাল যে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গিয়েছে, তা প্রকাশ্যে এসেছে বারবার। এবার ধরা পড়ল ভারতের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি! কোটি কোটি টাকা টাকার বিনিময়ে কলেজের অনুমোদন, মান নিয়ন্ত্রণ! কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস করল খোদ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
মামলায় নাম জড়িয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি), বহু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের-এবং এমনকী ইউজিসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সেস-এর বর্তমান চ্যান্সেলর ডি পি সিং-এরও। সিবিআই জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চলা এক সুপরিকল্পিত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মেডিক্যাল কলেজগুলির স্বীকৃতি, পরিদর্শন ও নবীকরণের গোপন তথ্য ফাঁস করা হচ্ছিল। চলছিল কল্পিত পরিকাঠামোর প্রদর্শন, ভুয়ো শিক্ষক ও রোগীর ব্যবস্থাপনা, ঘুষের বিনিময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনপসন্দ রিপোর্ট সংগ্রহ ইত্যাদি।
উক্ত অভিযোগে নাম রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার, বেসরকারি কলেজ কর্তা, মধ্যস্থতাকারী, এমনকী মেডিক্যাল রেটিং বোর্ডের সদস্যদেরও। সিবিআইয়ের এফআইআরে বলা হয়েছে, দিল্লির এক দল সরকারি আধিকারিক, যাঁরা স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও এনএমসির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তাঁরা গোপন সরকারি নথির ছবি তুলে মোবাইল ফোনে বেসরকারি কলেজের সঙ্গে যুক্ত দালালদের কাছে পাঠাতেন। সেই তথ্যের মধ্যে থাকত নির্দিষ্ট দিনে কোন কলেজে পরিদর্শন হবে, কোন আধিকারিক যাবেন, এবং রিপোর্টে কী কী বলা হয়েছে, সবই।
এভাবেই আগাম খবর পেয়ে এক ভুয়ো ছবি সাজিয়ে রাখত সংশ্লিষ্ট কলেজগুলি। কিছুক্ষণের জন্য ভাড়া করা ‘ফ্যাকাল্টি’, ভাড়া করা ভুয়ো রোগী, ক্লোন করা আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে উপস্থিতি দেখানোর জালিয়াতি চলত অবাধে। এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হত মূল্যায়নকারীদের। সিবিআই যে ৩৪ জনের নামে এফআইআর দায়ের করেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাওয়াতপুরা সরকার ওরফে রবিশঙ্কর মহারাজ, গুরুগ্রামের বীরেন্দ্র কুমার, দ্বারকার মনীষা যোশী, ইন্দোরের ইনডেক্স মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান সুরেশ সিং ভদোরিয়া, উদয়পুরের গীতাঞ্জলি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ময়ূর রাওয়াল-সহ একাধিক ব্যক্তি। জানা গিয়েছে, উত্তর ভারতের প্রায় সব রাজ্যের পাশাপাশি দক্ষিণেও ছড়িয়ে এর জাল। এই কেলেঙ্কারির নেপথ্যে রাজনৈতিক যোগ রয়েছে কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও।