প্রতিবেদন : ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কৃষক স্বার্থরক্ষা নিয়ে একের পর এক গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মোদী সরকার। কিন্তু আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা? বছরের পর বছর কেটে গেলেও চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন গুজরান হচ্ছে কৃষকদের। খোদ সরকারি রিপোর্ট বলছে, দেশজুড়ে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা! এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিজেপি জোটশাসিত মহারাষ্ট্রের। চলতি বছরে মাত্র তিন মাসে এই অঞ্চলে আত্মঘাতী হয়েছেন ৭৬৭ জন কৃষক। সম্প্রতি বিধানসভা অধিবেশনে এই তথ্যই প্রকাশ্যে এনেছে মহারাষ্ট্র সরকার।
অধিবেশন চলাকালীন সরকারের কাছে রাজ্যের কৃষক আত্মহত্যা সংক্রান্ত তথ্য চায় বিরোধী দল কংগ্রেস। সেখানেই সরকারের তরফে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে আত্মঘাতী হয়েছেন ৭৬৭ জন কৃষক। এদের মধ্যে ৩৭৬ জনের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে সরকারের তরফে। আত্মঘাতী কৃষকদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদর্ভ অঞ্চলের বাসিন্দা। বিদর্ভের ইয়াতমাল, অমরাবতী, আকোলা, বুলদানা ও ওয়াসিম অঞ্চলে এই তিন মাসে আত্মঘাতী হয়েছেন ২৫৭ জন। পাশাপাশি হাঙ্গোলি জেলার মারাঠওয়াড়া অঞ্চলে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন ২৪ জন কৃষক। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত এই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে সরকারের তরফে। পরবর্তী তিন মাসে এই সংখ্যাটা আরও গুরুতর পর্যায়ে গিয়েছে বলেই অনুমান।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে লাগাতার কৃষক আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে দেশ। মহারাষ্ট্র তো বটেই, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে কৃষক আন্দোলনের জেরে চাপের মুখে পড়েছে সরকার। হরিয়ানাতে এখনও চলছে কৃষক আন্দোলন। এর মাঝেই মহারাষ্ট্রে ফুটে উঠল কৃষকদের করুণ চিত্র। সরকারকে কড়া ভাষায় একহাত নিয়েছে বিরোধী শিবির। তাদের অভিযোগ, তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তবে সরকারের দাবি, মৃতদের পরিবারের তরফে নাকি সরকারের কাছে আবেদনই জানানো হয়নি!
পাশাপাশি তারা জানাচ্ছে, আত্মহত্যার ঘটনায় রাশ টানতে সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে, কেন্দ্রীয় সরকার ৬০০০ টাকা দিচ্ছে এবং রাজ্য সরকারও দরিদ্র কৃষকদের বার্ষিক ৬০০০ টাকা করে দিচ্ছে। যদিও কৃষকদের অভিযোগ, খাতায় কলমে নিয়ম থাকলেও বাস্তবে তা পাওয়া যায় না। কৃষি ঋণ মুকুব ও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না বাড়লে ফসলের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। যার জেরেই বিপুল ঋণের কবলে পড়ে আত্মঘাতী হতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।