নয়াদিল্লি: নরেন্দ্র মোদীর আমলে রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাচারের কবল থেকে রেহাই পায়নি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রও। বিভিন্ন সময় পাঠক্রম থেকে বাদ গিয়েছে মুঘল ইতিহাসের মতো বিজেপির ‘না-পসন্দ’ নানান বিষয়। এই আবহেই প্রকাশ্যে এল একটি চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। ২০২৫ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার সূচকে (অ্যাকাডেমিক ফ্রিডম ইনডেক্স বা এএফআই) একেবারে শেষের সারিতে ভারত।
উক্ত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১৭৯টি দেশের মধ্যে ১৫৬তম স্থানে রয়েছে ভারত( অন্তিম ১০ থেকে ২০ শতাংশের সারণিতে)। ভি-ডেম ইনস্টিটিউট প্রকাশিত আন্তর্জাতিক রিপোর্টে ২০২২ সালে ভারতের স্কোর ছিল ০.৩৮ শতাংশ। চলতি বছরে তা আরও কমে ০.১৬। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী পড়াতে পারবেন, কী পারবেন না, গবেষণার বিষয় কেমন হবে, সব কিছুতে ফরমান জারি হচ্ছে মোদীর আমলে।
সম্প্রতি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দির অধ্যাপক অপূর্বানন্দ অভিযোগ করেছেন, বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাঁর ছুটি মঞ্জুর করেনি কর্তৃপক্ষ। বিতর্কিত স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান কুণাল কামরার ‘পডকাস্টে’ অংশ নেওয়াই তাঁর অপরাধ! ইতিমধ্যেই এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে।
এএফআই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বহুত্ববাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির (অ্যান্টি-প্লুরালিস্ট পার্টি) নির্বাচনী সাফল্যই শিক্ষার জগতে স্বাধীনতার পরিসর সংকীর্ণতর হওয়ার সম্ভাব্য কারণ। বিগত ৫০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি বহুত্ববাদ বিরোধী দলগুলির দায়বদ্ধতা নেই বললেই চলে। তারা রাজনৈতিক বিরোধী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের পরিপন্থী। ফলত এই দলগুলির শাসনে তথ্য ও বাকস্বাধীনতাই নয়, সংশয়ের মুখে পড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রের স্বাধীনতাও।
পাশাপাশি, রিপোর্টে এমন ৩৪টি দেশ ও অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে গত ১০ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরিবেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে নিম্নমুখী। সেই তালিকাতেই রয়েছে ভারত। অর্থাৎ মোদী-জমানায় স্পষ্টতই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা বিপন্ন। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারেও ভারতের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্সকারী শেষ ১০-২০ শতাংশের তালিকায় রয়েছে ভারত, চীন ও বাংলাদেশ। ভারতের স্থান হয়েছে বাংলাদেশেরও নীচে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটান রয়েছে প্রথম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের তালিকায়। তারও উপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।
কোন দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরিবেশ কতটা, তা সাধারণত নির্ধারণ করা হয় বেশ কিছু ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে। সেগুলি হল, পাঠদান ও গবেষণার কাজে স্বাধীনতা, অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ, প্রাতিষ্ঠানিক স্বশাসন, ক্যাম্পাসে স্বাধীনতার পরিবেশ, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা। আর বিজেপির আমলে যার বেশিরভাগই কার্যত উধাও! মতামত প্রকাশের অধিকার খর্বের অভিযোগে বারবার ক্ষুব্ধ হয়েছে শিক্ষাবিদ ও অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলি। স্কলারস অ্যাট রিস্ক’স (এসএআর)-এর ‘ফ্রি টু থিঙ্ক’ শীর্ষক ২০২৪ সালের রিপোর্টে ভারতে স্বাধীনতার পরিসর নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে ৬৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে গড়া সংগঠন এসএআর-এর বক্তব্য, পুলিশ দিয়ে পড়ুয়াদের প্রতিবাদ কর্মসূচি রুখতে মরিয়া মোদী সরকার। বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে গবেষণার কাজ চালানো প্রতিষ্ঠানগুলির তহবিল আটকানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে জোরপূর্বক দক্ষিণপন্থী এজেন্ডা চাপিয়ে দিচ্ছে বিজেপি।