লন্ডন : বৃহস্পতিবার বিলেতের বুকে নিজের ভাষণে নতুন বাংলার ছবি তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিংখ্যান ও তথ্য তুলে ধরে বুঝিয়ে দিলেন, কেন সারা দেশের সেরা বঙ্গ। পূর্বপরিকল্পিতভাবে এদিন মমতার ভাষণ চলাকালীন বিপত্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করেছিল রাম-বাম। আর সেই চক্রান্তকে হেলায় উড়িয়ে অক্সফোর্ডের মন জিতে নিলেন মমতা।
মমতার সাফ কথা, “এসব করে নিজের দেশকে অপমান করছ কেন? এসব না করে বাংলায় তোমাদের দলগুলিকে শক্তিশালী হতে বলো। তোমাদের নেতারা কোথাও গেলে এসব সামলাতে পারবে তো?” এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “এসব ওদের স্বভাব। বদলাতে পারবে না।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ঘটনা তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করল। এবার বছরে দু’বার আসবেন এখানে। পরে এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে এসএফআই-ইউকে। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই ৬ জন এখানকার পড়ুয়া নয়। বহিরাগত তারা।
এদিন অধ্যাপক জোনাথন মিচি এবং লর্ড করণ বিলিমোরিয়াকে পাশে নিয়ে নিজের মিনিটের বক্তৃতায় মমতা বোঝালেন তাঁর উন্নয়নের ‘মডেল’। যার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র দূরীকরণ, ৪৬ শতাংশ বেকারত্ব কমানো, জিডিপি বাড়ানো, বাংলার বাড়ি, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড, বিনামূল্যে চাল, চিকিৎসা, শস্যবিমা। শ্রমিক, কৃষক, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তাঁর ভাবনার কথা, কাজের কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, প্রান্তিক কৃষক থেকে আইটি সেক্টর, কন্যাশ্রী থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা-শিল্পে কেন ও কীভাবে অন্যান্য রাজ্যকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে বাংলা।
পাশাপাশি, নারী ক্ষমতায়ন ও শিশুদের জন্য মমতার যুগান্তকারী পরিকল্পনার কথাও উঠে এল তাঁর ভাষণে। সেইসঙ্গে কলকাতায় অক্সফোর্ডের একটি ক্যাম্পাস তৈরির অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, জমি দেবে রাজ্য সরকার। নিজের স্বাভাবিক বাচনভঙ্গি ও সরলতায় উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী-জনতার মন জয় করলেন মমতা। ভাসলেন উষ্ণ অভ্যর্থনায়। কীভাবে কোনও বিভাজন ছাড়া সর্বধর্ম সমন্বয় বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে বাংলা, সেই উদাহরণও তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, তাঁর রাজ্যে ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু, এছাড়াও আদিবাসী, তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন্য সাধারণ মানুষ রয়েছেন। বাংলায় নিজেদের ধর্ম-সংস্কৃতি মেনে একসঙ্গে নিশ্চিন্তে বাস করেন সকলেই।
এছাড়া, নিজের সূচনা করা ৯৭টি সামাজিক প্রকল্প কীভাবে বাংলার মানুষকে সুরক্ষা দিচ্ছে, সে-কথাও বলেছেন মমতা। অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী না হলে যে কোনও দেশ বা রাজ্য পরিপূর্ণতা পায় না, সে কথা ব্যাখ্যা করে কোভিড-পরবর্তী অধ্যায়ে বাংলার মজবুত অর্থনীতিকে তুলে ধরেছেন। বাংলার শিল্পের কথা বলেছেন। এবছর বিজিবিএস-এ চার লক্ষ কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, সে কথাও জানিয়েছেন। আগের প্রস্তাবনার বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে, উল্লেখ করেছেন তা। বক্তব্য শেষে বিলিমোরিয়ার প্রাণশক্তি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার টাইটেল ব্যানার্জি। যার মানে এনার্জি। আর মানুষই আমার প্রাণশক্তি। মা-মাটি-মানুষই আমায় শক্তি জোগায়।” এ কথার পরেই হলঘর মুখরিত হয়ে ওঠে করতালিতে।