কলকাতা : পশু-চিকিৎসায় নতুন নজির গড়ল বাংলা। খেলতে খেলতে তুলো-কাপড়ের খেলনার অংশ ছিঁড়ে গিলে নিয়েছিল বছর পাঁচেকের ‘হরিপ্রসাদ’। প্রয়োজন হয় জটিল অস্ত্রোপচারের। ঝুঁকি ছিল বিস্তর। ছিল প্রাণসংশয়। শেষপর্যন্ত বিশেষ এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে মাত্র ১৫ মিনিটে তার পেট থেকে তুলো-কাপড়ের পিণ্ড বের করে আনল অ্যানিম্যাল হেলথ প্যাথলজি ল্যাবের চিকিৎসকের দল। একঘণ্টার মধ্যেই সুস্থ জীবন নিয়ে বাড়িতে ফিরে এল নেতাজী নগরের শুভময় চক্রবর্তীর পোষ্য সারমেয় ‘হরিপ্রসাদ’।
হরিপ্রসাদের অভিভাবক শুভময় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঘটনাটি শনিবারের। খেলনা পুতুলের পা গিলে নিয়েছিল হরিপ্রসাদ। কলকাতা কিংবা বাংলা তো বটেই, সমগ্র পূর্ব ভারতের মধ্যে প্রথমবার এমন জটিল অস্ত্রোপচার সফল করে অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করল এএইচপিএল। সারমেয়দের মধ্যে খেলতে খেলতে কোনও কিছু গিলে ফেলাকে পশু চিকিৎসকদের ভাষায় বলে ‘গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল ফরেন বডি’। স্বাভাবিকভাবে সেই অযাচিত বস্তু বের করতে এক্সপ্লোরেটরি ল্যাপারোটমি বা গ্যাস্ট্রোটমি করা হয়। কিন্তু সেই অস্ত্রোপচার বেশ কঠিন, সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। হরিপ্রসাদের ক্ষেত্রে নেওয়া হল অভিনব পন্থা। গত মঙ্গলবার পশু চিকিৎসক ডাঃ সব্যসাচী কোনারের নেতৃত্বে ডাঃ এস মণ্ডল-সহ অ্যানিম্যাল হেলথ প্যাথলজি ল্যাবের চিকিৎসকরা ঠিক করলেন, ‘এন্ডোস্কোপি গাইডেড গ্যাস্ট্রিক ফরেন বডি রিমুভাল’ পদ্ধতিতে হরিপ্রসাদের মুখ দিয়ে নল ঢুকিয়ে বের করে আনা হবে সেই ফরেন বডি। কিন্তু তার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই কলকাতায়।
আর এখানেই অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিল অ্যানিম্যাল হেলথ প্যাথলজি ল্যাব। জরুরি ভিত্তিতে বুধবারই প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে কলকাতায় উড়িয়ে আনা হয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বৃহস্পতিবার মাত্র ১৫ মিনিটে হরিপ্রসাদের অন্ত্রের কাছে আটকে থাকা তুলো ও কাপড়ের পিণ্ডটিকে বের করে আনা হয়। এ-নিয়ে এএইচপিএলের কর্ণধার প্রতীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “এই কেসে অস্ত্রোপচার অত্যন্ত কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আর অস্ত্রোপচার না করে এন্ডোস্কোপি, কলকাতা তো বটেই, গোটা পূর্ব ভারতে এর পরিকাঠামো ছিল না। এএইচপিএলের তরফে এই পদক্ষেপ তাই নজির হয়ে রইল।”