নয়াদিল্লি : কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর(Railway Minister) মন্তব্য ঘিরে সোমবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল সংসদ। এদিন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দাবি করেন, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা এলাকায় নাকি রেল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে! আর সেই অভিযোগ পুরোপুরি নস্যাৎ করে তৃণমূলের বক্তব্য, ‘ণত্ব ষত্ব’ জ্ঞান হারিয়েছেন রেলমন্ত্রী। যে জোকা-বিবাদী বাগ রেল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কথা বলছেন তিনি, আদৌ মমতার কেন্দ্র দিয়ে যায়নি সেই প্রকল্প।
Read More: ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত আইনি জটেই আটকে রয়েছে নিয়োগ, সাফ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
এদিন শুরু থেকে সংসদের উভয় কক্ষেই আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মূলত রেল। রাজ্যসভার আলোচনায় ছিল রেলের কর্মপদ্ধতি, লোকসভায় রেলের ব্যয়বরাদ্দ। আলোচনা চলে অনেক রাত অবধি। রাজ্যসভায় রেলের কর্মপদ্ধতি নিয়ে কথা হলেও রেলমন্ত্রী(Railway Minister) নিজের জবাবে বারংবার তা গুলিয়ে ফেলে ‘রেল বাজেট’ বলে মন্তব্য করেন, এমনটাই দাবি করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এ নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আপত্তি (পয়েন্ট অব অর্ডার) জানান তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন। কিন্তু চেয়ারম্যান তাতে কর্ণপাত না করায় রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করেন তৃণমূলের সাংসদেরা। পরে ডেরেক জানান, বিতর্কের শেষে তিনি ফের বিষয়গুলি রাজ্যসভায় উত্থাপন করেছেন। সাংসদের আপত্তি তোলার অধিকার যে রয়েছে, তা মেনে নেয় সরকার। পাশাপাশি, রেলমন্ত্রী যে সব স্থানে ‘রেলের বাজেট’ বলে মন্তব্য করেছেন, তা সংশোধন করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় সরকারের তরফে।
গত বহুদিন ধরেই রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বাংলার রেল প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রিতার পিছনে জমি অধিগ্রহণে তৃণমূল সরকারের অনিচ্ছাকে দায়ী করে আসছেন। আজও তিনি বলেন, ‘‘মমতার কেন্দ্রে জোকা-বিবাদী বাগ রেল প্রকল্পের কাজ খিদিরপুরের কাছে জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যায় আটকে গিয়েছে।’’ পরে সংসদের বাইরে এ প্রসঙ্গে সরব হন তৃণমূলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। ‘‘জমির সমস্যা রয়েছে মোমিনপুরে। খিদিরপুরে নয়। ওই এলাকা কোনও ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর এলাকায় পড়ে না। আসলে বাংলাকে বঞ্চনা করতে গিয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন রেলমন্ত্রী’’, জানান তিনি।

পাশাপাশি, রাজ্যসভায় সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের জন্য রেলমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা প্রত্যাহার করা হল কেন, কেন্দ্রের কাছে তার জবাব চাইলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। অবিলম্বে সরকার স্বীকৃত সাংবাদিক এবং তাঁদের পরিবারের জন্যে রেলের এই বিশেষ কনসেশন চালু করার দাবি জানান তিনি। এদিন রাজ্যসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে ঋতব্রত বলেন, রেলমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার স্বীকৃত সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ সচিত্র পরিচয়পত্রও চালু করেছিলেন, রেলের আসন সংরক্ষণ এবং টিকিট মূল্যে ছাড়ের উদ্দেশ্যে। সাংবাদিকদের পরিবারও বছরে দু’বার এই সুবিধা পেতেন। কিন্তু কোভিড পিরিয়ডের পর
সবই বন্ধ। শীঘ্রই সাংবাদিকদের এই সুবিধা
ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঋতব্রত।
অন্যদিকে, লোকসভায় অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ সংক্রান্ত বিতর্কে রেলের তথৈবচ পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে সরব হন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। তিনি বলেন, দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পরেও পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। বড়লোকদের জন্য বন্দে ভারত ট্রেন থাকলেও আমজনতাকে জেনারেল কামরায় ভিড়ের মধ্যে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। পাশাপাশি টিকিট বাতিল হলে কেন যাত্রীদের ভাড়ার একটি অংশ কেটে নেওয়া হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ‘‘তথ্যের অধিকার আইনে জানা গিয়েছে ২০১৯-২৩ সময়কালে বাতিল টিকিট থেকে রেলের আয় হয়েছে ৬১১৩.৮ কোটি টাকা। তেমনই অপেক্ষারত (ওয়েট লিস্ট) টিকিট বাতিল থেকে আয় হয়েছে ১২২৯.৮৫ কোটি টাকা’’, বক্তব্য তাঁর।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1901950556207550737
এছাড়া তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতার আমলের তুলনায় এখন চার হাজার ট্রেন কম চলছে। যাত্রী পরিবহণে বৃদ্ধির হার নেতিবাচক। পণ্য পরিবহণেও আশার আলো নেই। যাত্রী সুরক্ষায় মমতার সময়ে ১২ কোম্পানি মহিলা রেল পুলিশ থাকলেও, এখন তা কমে হয়েছে ৭ কোম্পানি। রেলে চালকের পদ খালি রয়েছে কুড়ি হাজার, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সার্বিক ভাবে নিয়োগ কমে গিয়েছে রেলে।’’ সব মিলিয়ে রেলে ২.৭ লক্ষ পদ খালি (জুন,২০২৩ পর্যন্ত) রয়েছে বলে দাবি করেন কল্যাণ। ওই বিতর্কে বাংলার প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে তৃণমূল সাংসদ জুন মাল্যও সুর চড়িয়েছেন।