প্রতিবেদন : একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হতশ্রী হারের পর থেকেই ক্রমশ করুণতর হয়েছে বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP)পরিস্থিতি। দুর্বল হয়েছে সংগঠন। ছিলেন ৭৭ জন বিধায়ক। সেই সংখ্যা এখন নেমে দাঁড়িয়েছে ৬৫-তে। দফায় দফায় দল ছেড়েছেন ৮ বিধায়ক। প্রয়াণ বা ইস্তফাজনিত উপনির্বাচনগুলির একটিতেও বিজেপি জেতেনি। আর দলত্যাগী বিধায়কদের তালিকায় নবতম সংযোজন হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পদ্ম-নেতৃত্ব। তবে এখানেই শেষ নয়। সূত্রের খবর, দলকে দুশ্চিন্তায় রেখেছে আরও আট জনের গতিবিধি। ‘বেসুরো’ উত্তরবঙ্গ, রাঢ়বঙ্গ ও মতুয়া অঞ্চলের বিধায়করাও।
গত কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন কার্শিয়াঙের বিজেপি(Bengal BJP) বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। ভোটের আগে বিজেপি পাহাড়ের জন্য ‘বিশেষ মর্যাদা’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে বিষ্ণুপ্রসাদের দাবি। পাহাড়কে বাংলা থেকে আলাদা করে পৃথক রাজ্য তৈরি করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন। তা নিয়ে বার বার তিনি প্রকাশ্যে মন্তব্যও করেছেন। দল সে সব বক্তব্য অনুমোদন না করায় বিষ্ণুপ্রসাদ দলের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন। প্রয়োজনে দল ছাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তবে তিনি তৃণমূলে যাবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। কারণ, পৃথক রাজ্যের দাবি মানে না তৃণমূল।
Read More: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আজাদ কাশ্মীর’ স্লোগান! মামলা রুজু কলকাতা পুলিশের
পাশাপাশি, উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায় বিজেপি(Bengal BJP) ছেড়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে ফেরেন। তবে সৌমেনের আসল আনুগত্য বিজেপির প্রতি, না কোচবিহারের রাজবংশী নেতা অনন্ত মহারাজের প্রতি, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিজেপির একাংশের দাবি, অনন্ত মহারাজের সুপারিশেই ২০২১ সালে কালিয়াগঞ্জে সৌমেন টিকিট পান। অনন্ত বিজেপির প্রতি রুষ্ট হলে সৌমেন তৃণমূলে চলে যান। আবার বিজেপি অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠাতেই ফিরে আসেন সৌমেন। ইদানীং আবার অনন্ত-বিজেপি বিরোধের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সৌমেনও কি তাহলে দল ছাড়বেন? শুরু হয়েছে জল্পনা।
রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জেলাও মাথাব্যথা বাড়িয়েছে বিজেপি(Bengal BJP) নেতৃত্বের। দক্ষিণ দিনাজপুরে নবনির্বাচিত মণ্ডল সভাপতিদের তালিকা ঘোষিত হওয়ার পর জেলার এক বিজেপি বিধায়ক দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন। পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে হারানোর চক্রান্ত হয়েছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই বিধায়ক তৃণমূলে যেতে পারেন বলে বছরখানেক আগে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এখন তিনি ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব উসকে দিতেই অস্বস্তি শুরু হয়েছে দলের অন্দরে।
বাংলার যে দুই জেলায় মতুয়া ভোট সবচেয়ে বেশি, সেই নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনাতেও কয়েক জন বিধায়ক অনেক দিন ধরে চাপে রেখেছেন দলকে। এঁদের মধ্যে তিন জনকে নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির(Bengal BJP) দুশ্চিন্তা বেড়েছিল। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে লোকসভা নির্বাচনে টিকিট দিয়ে কোনও ক্রমে দলবদল ঠেকানো হয় বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। দু’জনেই হেরেছিলেন। কিন্তু ভোটের আগে তাঁরা দল ছেড়ে চলে গেলে বিজেপি আরও দু’টি আসন হারাতে পারত বলে মনে করেন দলের একাংশ। ওই অঞ্চলেরই আর এক বিধায়ক দিন দুয়েকের জন্য নিজের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবার ওই অঞ্চলের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী। কিন্তু পরিবারের অবস্থানের বিপরীত পথে হেঁটে তিনি তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের সময়। সেই সম্ভাবনা সামলাতে নাকি হস্তক্ষেপ করতে হয় এক হেভিওয়েট নেতাকেও।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1899518091161419890
এছাড়া বাংলার রাঢ় অঞ্চল থেকেও জনাদুয়েক পদ্ম-বিধায়কের বেসুরো হওয়া নিয়ে দলের অন্দরে চর্চা চলছে। এক জন হুগলি-বাঁকুড়া সীমানা এলাকার নেতা। আগে বামপন্থী দলের বিধায়ক ছিলেন তিনি। অন্য জন আরও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল থেকে নির্বাচিত। রাজনীতিতে বেশ পুরোনো নাম। প্রথম জন বিভিন্ন আলাপচারিতায় ইদানীং বলছেন, ‘‘বিজেপি, (Bengal BJP)তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস, কোনও দলই খারাপ নয়। দল কখনও খারাপ হয় না। দলের কিছু লোক খারাপ হতে পারে।’’ অন্য জন গোড়া থেকেই বিজেপিতে অতৃপ্ত। তিন স্তরের নির্বাচনে দল তাঁকে লড়াইয়ের সুযোগ দিয়েছে। দু’টি স্তরে জিতেছেনও তিনি। কিন্তু নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ সুখকর নয় বলেই সকলে জানেন। আড়ালে তাঁকে বিরূপ মন্তব্য করতেও শোনা গিয়েছে। এই বিধায়ককে নিয়ে আগেও দলবদলের জল্পনা ছড়িয়েছিল।
সোমবার তাপসীর আকস্মিক দলত্যাগের খবরে কার্যত বজ্রাঘাত অনুভব করেছিল বিজেপি।(Bengal BJP) আর এমন আবহেই এই আট ‘বেসুরো’ বিধায়ককে নিয়েও ক্রমশ বাড়ছে চাপ। তাঁদের গতিবিধিতেও নজর রাখছে দল। তবে এভাবে চললে বাংলার ভোটে যে ফের ভরাডুবিই সঙ্গী হবে বিজেপির, সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।