প্রতিবেদন : মোদী-জমানায় দেশজুড়ে বারবার ফুটে উঠেছে কর্মসংস্থানের বেহাল চিত্র। ক্রমশ প্রকট হয়েছে বেকারত্ব। কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি নিয়ে নরেন্দ্র মোদী যে গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পুরোপুরি অসত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে বারবার। এবার কেন্দ্রীয় রিপোর্টেই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠল সেই ছবি। বেকারত্ব কমা দূর অস্ত, মোদীর আমলে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে গিয়েছে হু-হু করে। আর এ-ব্যাপারে বিরোধী রাজ্যগুলোকে নিশ্চিতভাবেই পিছনে ফেলে দিচ্ছে বিজেপিশাসিত ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলি! নতুন বাজেটেও কোনওভাবেই দেশের শিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের জন্য নতুন জীবিকার পথ দেখাতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে গোটা দেশে বেকারত্বের পরিমাণ দশমিকের হিসাবে কমাতে সাহায্য করেছে বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলিই। যার অন্যতম হল বাংলা।
কেন্দ্র নানান তথ্যের ফুলঝুড়ি দিয়ে বেকার-সমস্যা আড়াল করার চেষ্টা করলেও পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা ব্যবস্থাপন দফতরের রিপোর্টেই তা প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। মন্ত্রকের হিসাবে দেশে ২০২৩ সালের শেষে যেখানে বেকারত্বের সামগ্রিক হার ছিল ১৬.৫ শতাংশ, ২০২৪ সালের এপ্রিল-জুন মাসে তা বেড়ে ১৬.০৮ শতাংশে পৌঁছে যায়। ২০২৪ সালের শেষে কিছুটা কমিয়ে বেকারত্বের হারকে ১৬.০১ শতাংশে আনতে সক্ষম হয় বিজেপি সরকার। কিন্তু দেখা যায় দেশের সামগ্রিক বেকারত্বের হার কমেনি একেবারেই।
তথ্যের দাবি, কর্মহীনতার শীর্ষে রয়েছে বিজেপিশাসিত আসাম, বিহার, ওড়িশার মতো রাজ্য। তালিকায় সবার আগে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর, যেখানে বেকারত্বের হার ৩৫ শতাংশ। এখানে ন্যাশনাল কনফারন্সের জোট সরকার সদ্য ক্ষমতায় এসেছে। তার আগে দীর্ঘ পাঁচ বছর এই রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে ফেলে রাখা হয়েছিল। কর্মসংস্থানকে আঁধারে ঠেলে দিয়েছিল গেরুয়া প্রশাসন।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির হাতে থাকা আসামের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ২০২৩ সালের শেষে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ২০.৫ শতাংশ, সেখানে ২০২৪ সালের শেষে বেকারত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.০৫ শতাংশে। ওড়িশায় নবীন পট্টনায়েকের সরকারকে হারিয়ে প্রবল উন্নয়নের বার্তা দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যের। ২০২৩ সালের শেষে বেকারত্ব ২১.৫ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালের শেষে দাঁড়িয়েছে ২৬.০৬ শতাংশে। আবার হরিয়ানায় ক্ষমতা ভোগ করে সেখানেও যুবনীতি যে বিজেপির একেবারে ব্যর্থ তা প্রমাণ করছে শহুরে শিক্ষিতদের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি। যেখানে ২০২৩ সালের শেষে বেকারত্ব ছিল ৮.৩ শতাংশ, ডবল ইঞ্জিন সরকার গঠন হওয়ার পরে তা একলাফে বেড়ে হয়েছে ১২.৯ শতাংশ।
পাশাপাশি, বিজেপি জোট সরকারের বিহারে বেকারত্ব ১৮.৭ শতাংশ থেকে একলাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬.৪ শতাংশে। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা রূপায়ণ মন্ত্রকের তথ্যে প্রতি তিন মাস হিসাবে তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে আরও এক বিজেপি রাজ্য মধ্যপ্রদেশের বেকারত্বের পরিস্থিতিও খারাপ দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর পিরিয়ডে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ১৩.৩ শতাংশ সেখানে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পিরিয়ডে তা বেড়ে ১৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।