প্রতিবেদন : নরেন্দ্র মোদীর আমলে একদিকে যেমন ক্রমশ বিপর্যয়ের আঁধারে এগিয়ে চলেছে দেশের অর্থনীতি, তেমনই অন্যদিকে বাংলায় বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের হাতে নগদ অর্থের জোগান বাড়িয়ে অর্থনৈতিক কাঠামো মজবুত করে তুলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কর এবং রাজস্ব খাতে আয় সাফল্যের সঙ্গে বেড়েছে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ পণ্য পরিষেবা কর বা জিএসটি আদায়ে রাজ্যের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
চলতি আর্থিক বছরে প্রথম দশ মাসের জিএসটি আদায়ের অঙ্ক গত বছরের এই সময়ের তুলনায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বাড়াতে সমর্থ হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গত আর্থিক বছরের জানুয়ারির তুলনায় এই বছর জানুয়ারিতে রাজ্যের জিএসটি সংগ্রহ বেড়েছে প্রায় ১.২ শতাংশ। অর্থ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে এপ্রিল থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে জিএসটি আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা৷ গত অর্থবর্ষের প্রথম দশ মাসে রাজ্যের জিএসটি বাবদ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
নবান্ন সূত্রে খবর, এই বছর রাজ্য সরকারের জিএসটি মারফত আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, এখনও পর্যন্ত তার থেকেও বেশি রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে। শুধু জিএসটি-ই নয়, অন্যান্য কর এবং রাজস্ব খাত মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি আয় হয়েছে রাজ্যের। সবচেয়ে বেশি জিএসটি আদায় হয়েছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে, যা রাজ্যের অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থানকে আরও একবার পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজ্যের মানুষের হাতে নগদের প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রায় ৯৪টি জনমুখী প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বারবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা বলা হলেও জনকল্যাণ কর্মসূচির রূপায়ণের ক্ষেত্রে কোথাও বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়নি। আর সেই জায়গা থেকে জিএসটি বাবদ আয় বৃদ্ধি উন্নয়নমূলক কাজে যে গতি আনবে, তা বলাই বাহুল্য।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধু এবং স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড-সহ নানান প্রকল্পগুলি বাংলার আর্থিক গতিশীলতাকে উৎসাহিত করেছে। এর ফলে বাজারে চাহিদা বেড়েছে এবং রাজ্যের পণ্য ও পরিষেবা শিল্পের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। রাজ্যের অর্থ দফতরের এক আধিকারিকের মতে, এই আয় বৃদ্ধি নতুন জনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজ্যকে আরও বেশি সুযোগ করে দেবে। তৃণমূল সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সামাজিক প্রকল্পগুলির পরিধি আরও বাড়ানো হতে পারে, যা পরোক্ষভাবে রাজ্যের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে আরও জোরালো করবে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, চলতি অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে এই প্রবণতা বজায় থাকলে রাজ্যের জিএসটি মারফত আয় নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে। রাজ্য সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ আরও বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব সরাসরি পড়বে জনমুখী প্রকল্পগুলিতেও, এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।