প্রতি বছরের মতোই শুক্রবার বিকেলে দেশপ্রিয় পার্কের ‘অমর একুশে’ মঞ্চে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের আয়োজন করল রাজ্য সরকার। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক ক্ষেত্রের বিশিষ্ট গুণীজনেরা। মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলা-সহ সমস্ত ভাষার প্রতিই সমান শ্রদ্ধাশীল তিনি। রাজ্য সরকার বাংলার পাশাপাশি অলচিকি, কুরমালি, গোর্খা-সহ রাজ্য সরকার বহু ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। পাশাপাশি এই বিশেষ দিনটি প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে উৎসর্গ করেন মমতা। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ল্যান্সডাউন প্লেস রাস্তার নাম রাখা হল ‘প্রতুল মুখার্জি সরণি’।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “ভাষা দিবস কারও কেনা নয়। আমরা সব ভাষাকেই শ্রদ্ধা করি।” এদিনের অনুষ্ঠান থেকে তাঁর প্রিয় ‘প্রতুলদা’র স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগঘন হয়ে পড়েন মমতা। প্রয়াত গায়ক সশরীরে না থাকলেও এদিনের অনুষ্ঠান হয়ে রইল ‘প্রতুলময়’। মঞ্চে প্রয়াত সঙ্গীতকারের ছবি রেখে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী -সহ বিশিষ্ট জনেরা। এরপর রাজ্য সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গেয়ে শুরু হল অনুষ্ঠান। মঞ্চে প্রতুলবাবুর স্ত্রী সর্বাণী মুখোপাধ্যায়কে নিজের পাশে বসালেন মুখ্যমন্ত্রী। সদ্য প্রিয়জনহারা বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরলেন পরম স্নেহ ও মমতায়। এরপরই প্রয়াত গায়কের কালজয়ী গান ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গাওয়া হল সমবেত কণ্ঠে।

স্মৃতির পাতা ছুঁয়ে মমতা জানান, “আমি সাধারণত হাসপাতালের আইটিইউ-আইসিইউতে যাই না। ওসব যন্ত্রপাতি দেখে কেমন ভয়-ভয় লাগে। কিন্তু উনি সাড়া দিচ্ছেন না শুনে গিয়েছিলাম। দেখলাম চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। প্রায় অচৈতন্য। ডাকলাম ও প্রতুলদা, আমি মমতা। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম উনি তাকালেন। চোখ দুটি জলে ভরা। বললাম, আপনাকে বাঁচতে হবে। গান গাইতে হবে। আমার গলা শুনে আচমকা প্রেসার ড্রপ করে গেল। আমি হাতের আঙুল টিপে দিলাম। প্রেসার উঠল। বললাম আপনাকে আবার ‘বাংলার গান গাইতে’ হবে। উনি হাত তুলে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, আর গাইতে পারব না। এই প্রতুলদার সঙ্গে আমার শেষ কথা। মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, তার আগে অনেকবার গেছি দেখা করতে। তিনি বলেন, প্রতুলদা আমাদের হৃদয় জুড়ে থাকবেন। তিনি যেখানেই থাকুন আমাদের কথা শুনছেন।” এমন আবেগমথিত আবহে এরপর একে একে জয় গোস্বামী, শ্রীজাত, সুবোধ সরকার, আবুল বাশার কবিতা পাঠ করলেন। শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইমন চক্রবর্তী, লোপামুদ্রা মিত্র, বাবুল সুপ্রিয়, রূপঙ্কর, গৌতম ঘোষের কণ্ঠে শোনা গেল গান।