মহাকুম্ভের আবহে নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে পুণ্যার্থীদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় আরও একবার বেআব্রু হয়েছে রেলের চূড়ান্ত অব্যবস্থার চিত্র। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়। মোদী-জমানায় রেলের পরিকাঠামো ও যাত্রী নিরাপত্তা যে ক্রমশই গড়িয়ে যাচ্ছে আঁধারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন যাত্রীরা। এর মধ্যেই প্রকাশ্যে আসছে একাধিক বিস্ফোরক তথ্য। যা তীব্র অস্বস্তিতে ফেলেছে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রককে। নিষেধ সত্ত্বেও জেনারেল ক্লাসের টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত কার নির্দেশে? সার্বিক গাফিলতি এড়াতে কি কোনও ‘অজানা’ অফিসারের ঘাড়ে দায় চাপাতে মরিয়া হয়েছে মন্ত্রক? উঠছে প্রশ্ন। রেলমন্ত্রক সূত্রে খবর, ওইদিন যাত্রীদের ভিড় মাত্রাছাড়া হতেই প্রয়াগরাজগামী সবক’টি স্পেশাল ট্রেনের অসংরক্ষিত টিকিট বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা মানা হয়নি। পরিবর্তে প্রতি মিনিটে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি জেনারেল ক্লাসের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, কুম্ভে যাত্রার জন্য শ’য়ে শ’য়ে পুণ্যার্থীর নিউদিল্লি স্টেশনে ঢুকে পড়তে কোনও সমস্যা হয়নি।
শনিবারের দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে দু’জন সদস্যর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল বোর্ড। রবিবার থেকে তারা তদন্ত শুরু করেছে। সেখানেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সতর্ক করা সত্বেও কে টিকিট বিক্রি পুরোদমে চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা ঘিরে দানা বাঁধছে সংশয়। তদন্তকারী কমিটির স্ক্যানারে সংশ্লিষ্ট বুকিং ক্লার্কের পাশাপাশি রয়েছেন সেই রেল আধিকারিকও। ভিড় মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে, এমন রিপোর্টকে কেন পাত্তা দেওয়া হয়নি, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মরিয়া তদন্তকারীরা। সবমিলিয়ে জোরালো হয়ে উঠছে রেলের চরম গাফিলতির তত্ত্বই। রেল বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’ করতে যে রেল সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, সেই বিষয়টি এখন খুল্লমখুল্লা। সম্ভবত সেই কারণেই এবার এতবড় দুর্ঘটনার দায় জনৈক আধিকারিকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে রেল বোর্ড।
এই ব্যাপারে রেল বোর্ডের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (ইনফরমেশন অ্যান্ড পাবলিসিটি) দিলীপ কুমার জানিয়েছেন, উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। সেই তদন্ত প্রক্রিয়ার আওতায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্যেক রেলকর্মী, আধিকারিকের সঙ্গে কমিটির সদস্যদের কথা বলতে হবে। পুরোটা খতিয়ে দেখার পরে রিপোর্ট পেশ করা সম্ভব। অর্থাৎ, আগামী দিনে কোনও কর্মী-আধিকারিকের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠার ইঙ্গিত যে স্পষ্ট, এমনই অনুমান তথ্যাভিজ্ঞ মহলের।
সূত্র অনুযায়ী, শনিবার রাতে নিউদিল্লি স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার পরেই সুরক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা আরপিএফের এক অফিসার মেসেজ পাঠিয়েছিলেন যে, আপাতত প্রয়াগরাজগামী স্পেশাল ট্রেনগুলির জন্য জেনারেল ক্লাসের টিকিট বিক্রি বন্ধ করা হোক। নাহলে ভিড় সামলানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। তাঁর ওই নির্দেশকে গুরুত্ব দিলে এত মানুষের মৃত্যু হয়তো এড়ানো সম্ভব হত বলে মনে করছেন অনেকেই। এর মধ্যে সেদিনের দুর্ঘটনার মৃতের সংখ্যা নিয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। রাতে আরপিএফের শীর্ষ সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, শনিবার পদপিষ্টের ঘটনায় ১৮ নয়, অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে আরপিএফ কোনও রিপোর্ট দিয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় ঘনায় মঙ্গলবার।