মহাকুম্ভের আবহে আরও একবার প্রকাশ্যে এল রেলের চূড়ান্ত অপদার্থতা। সংরক্ষিত টিকিট থাকার পরও ট্রেনে উঠতে পারলেন না কুম্ভ ফেরত পুণ্যার্থীরা! ভিড় হবে জেনে দু’ঘণ্টা আগেই স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা। ট্রেনে উঠতে না পারায় মোঘলসরাইয়ে আটকে পড়া ওই পুণ্যার্থীরা চারচাকা গাড়ি ভাড়া করে ফিরেছেন হুগলির শ্রীরামপুরে। এ জন্য তাঁদের খরচ হয়েছে প্রায় ৭২ হাজার টাকা। প্রায় দু’দিনের চরম কষ্টকর যাত্রাপথ অতিক্রম করার পর কোনওক্রমে প্রাণরক্ষা পাওয়ায় হাঁপ ছেড়েছেন যাত্রীরা। তবে এখনও আতঙ্ক তাড়া করছে তাঁদের।
সোমবার ভোরে শ্রীরামপুর এসে পৌঁছেছে পুণ্যার্থীদের এই দল। পুরো গোটা ঘটনার জন্য রেলের ব্যর্থতাকে দায়ী করে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। একজন বলেন, “দু’মাস আগে টিকিট কাটা হয়েছিল। কাশী, বিশ্বনাথ ঘুরে কুম্ভ স্নান করে আমরা ১৪ ফেব্রুয়ারি বেনারস স্টেশন যাই। দুন এক্সপ্রেসের টিকিট কাটা ছিল সকলের। দু’ঘণ্টা আগে স্টেশনে গিয়েও ট্রেনে উঠতে পারিনি। ভয়ানক ভিড় ছিল। আর রেলের তরফে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে কোনও পরিকল্পনাই ছিল না রেলের। ফলে আমরা ট্রেনে উঠতেই পারিনি। শেষ পর্যন্ত বহু টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করি। পথের আতঙ্ক এখনও তাড়া করছে। আমাদের পদপিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।”
এক প্রবীণ পুণ্যার্থী বলেন, “ভয়ানক অভিজ্ঞতা। ভিড় সামাল দিতে রেল ও কুম্ভের আয়োজকদের কোনও পরিকল্পনা ছিল বলে মনে হয় না।” আর এক পুণ্যার্থীর কথায়, “খুব আতঙ্কের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। সোমবার বাড়ি ফেরার পর স্বস্তি পাই। প্রবল ভিড়ের কারণে ট্রেনে ওঠাই যায়নি। পর্যাপ্ত ট্রেন থাকার প্রয়োজন ছিল। কুম্ভ স্নানের ভোগান্তি সারাজীবন মনে থাকবে।” শ্রীরামপুর থেকে প্রায় ৩০ জনের একটি দল রওনা দিয়েছিল মহাকুম্ভের উদ্দেশে। কাশী-বিশ্বনাথ, বেনারস সফর করে কুম্ভ স্নানের পরিকল্পনা ছিল। কয়েকজন প্রবীণও ছিলেন সেই দলে। তাঁরা প্রথমে অযোধ্যা যান। তারপর কাশী সফর করে ১৪ ফেব্রুয়ারি যান কুম্ভে। পরের দিন দুন এক্সপ্রেস ধরে ফিরে আসার কথা ছিল তাঁদের।
পুণ্যার্থীরা জানিয়েছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি সময়ের বহু আগে স্টেশনে যান তাঁরা। কিন্তু দুন এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময় স্টেশনে আসেনি। অনেক পরে ট্রেন স্টেশনে ঢোকে। তারপরই হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ট্রেন ছাড়ে অনেক পরে। এত ভিড় হয় যে, ভিড়ের ঠেলায় শ্রীরামপুরের দলটির অধিকাংশ সদস্য ট্রেনে উঠতেই পারেননি। কয়েকজন এসি কামরার টিকিট কেটেছিলেন। তাঁরাই কেবল উঠতে পেরেছেন। বাকিরা বেনারস স্টেশনেই রাত কাটান। পরের দিন মোঘলসরাই স্টেশনে যান। কিন্তু সেখানেও ট্রেনের অব্যবস্থা চোখে পড়ে। তারপর তাঁরা বাসের খোঁজ করেন। শেষ পর্যন্ত তিনটি চারচাকা গাড়ি ভাড়া করে মোঘলসরাই থেকে সোমবার ফিরে আসেন শ্রীরামপুরে।