বহুদিন ধরেই ‘রাজ্যে সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না’, এই বলে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলায় ধর্মীয় ভেদাভেদের বিষ ছড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। এবার এ নিয়ে প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগে বিজেপিকে কড়া ভাষায় বিঁধলেন তিনি। মঙ্গলবার বিধানসভায় জবাবি ভাষণে তিনি স্পষ্ট বললেন, “সরস্বতী পুজো নাকি করতে দেওয়া হয় না বাংলায়। সব বাড়িতে পুজো হয়েছে। সব স্কুল, কলেজে পুজো হয়েছে। সব পাড়ায় পুজোয় হয়েছে। সব ক্লাবে পুজো হয়েছে। সব ধরলে অন্তত ৩-৪ কোটি পুজো হয়েছে। একটা জায়গার একটা ঘটনাকে নিয়ে আপনারা বাংলাকে কলঙ্কিত করলেন। আমাকে কলঙ্কিত করলেন। হিন্দু ধর্মকে কলঙ্কিত করলেন।”
এদিন দুপুরে যখন মুখ্যমন্ত্রী বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন, ঠিক সেই সময় বিধানসভার সিঁড়িতে ধরনায় বসেন সাসপেন্ডেড বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখান থেকে তিনি দাবি করেন যে, মা সরস্বতীর অপমানের প্রতিবাদ করায় নাকি সাসপেন্ড হতে হয়েছে তাঁকে! এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ব্যাপারটা কী ছিল, জানতে হবে। সেখানেও পুজো হয়েছে। আমি যোগমায়া দেবী কলেজের ছাত্রী ছিলাম। যোগেশচন্দ্র চৌধুরীর ল কলেজে পড়তাম। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী ছিলাম না। যেহেতু ওখানে একটা নির্মাণের কাজ চলছে। ওখানে নোংরা পড়েছিল। সেজন্য বলেছিল, গেটের সামনে নয়, একটু সরিয়ে নাও। ওরা গেটের ভিতরে করতে চেয়েছিল। পরে আদালতে যায়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দুটো পুজোই হয়। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ ও ল কলেজে দুটো জায়গাতেই পুজো হয়েছে।” যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ ও ল কলেজে সরস্বতী পুজোর দুটি ছবিও অধিবেশন কক্ষে তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “আমি এভিডেন্স দিয়ে প্রমাণ করে দিলাম।” রেকর্ডের জন্য সেই দুটো ছবি স্পিকারের কাছে জমাও দেন তিনি।
আগেও বিজেপি নেতা অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুজোর ছুটি দিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু রমজানের সময় মুসলমানদের জন্য ছুটি বরাদ্দ করেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের পুজো করা নিয়ে বিভিন্ন বাধার কথা বলেছে বিরোধীদল বিজেপি। উক্ত প্রসঙ্গ তুলে এনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দিল্লির নেতারা আগে বলত দুর্গাপুজো করতে দেয় না। আমায় বলেছে আমি না কি, হিন্দু ধর্মকে তাচ্ছিল্য করি আর মুসলিম লীগ করি। আমায় এসব শুনতে হবে এখন?” রাজ্যে শবেবরাত ও পঞ্চানন বর্মার ছুটি নিয়ে পরপর দুদিন ছুটি ছিল। তা নিয়ে অপপ্রচার করতে শুরু করেন বিরোধীরা। পাল্টা জবাব দিতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। “ওরা বলছে আমি মুসলিম লীগ করি তাই শবেবরাতে দুদিন ছুটি দিয়েছি। আমি চ্যালেঞ্জ করছি ওদের। পঞ্চানন বর্মার ছুটির কথা জানতেন না? বাইরে আপনারা কী বলেছেন আমি দেখেছি। আপনারা বললেন হিন্দু ধর্ম নিয়ে কথা বলছিলেন বলে সাসপেন্ড! আপনি কবে থেকে হিন্দু ধর্মের নেতা হলেন? হিন্দু ধর্ম এত ছোট?”, সাফ জানিয়েছেন তিনি।