মোদী-জমানায় বারবার বেআব্রু হয়েছে রেলের অব্যবস্থার চিত্র। আকছার নিত্যনিতুন বিপদ ও সমস্যার কবলে পড়ছেন যাত্রীরা। কার্যত সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় রেল ও দুর্ঘটনা। গত কয়েক বছরে একাধিক প্রাণঘাতী ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এবার মহাকুম্ভের আবহেও রেলের অপদার্থতার সাক্ষী থাকছে সারা দেশ। প্রয়াগরাজ থেকে নয়াদিল্লি রেল স্টেশন, মহাকুম্ভের ব্যবস্থাপনায় চরম ব্যর্থ রেল এবং উত্তরপ্রদেশের ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার। কুম্ভের জন্য রেলের আয়োজন যে কতটা ফাঁপা প্রচার ছিল তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে একের পর এক পুণ্যার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। চাপে পড়ে কার্যত নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। নয়াদিল্লি স্টেশনের ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। এর জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠনের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। ১৮ জন যাত্রীর নির্মম মৃত্যুর জন্য রেলের কোনও গাফিলতি ছিল না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন নর্দার্ন রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক। তাহলে কুম্ভে ডেকে আনা এত মানুষের দায়িত্ব কার ছিল? প্রশ্ন তুলেছে স্বজনহারা পরিবারগুলি।
ঘটনায় কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারকে তীব্র নিন্দায় বিঁধেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, নিন্দনীয় ও প্রতিবাদযোগ্য। মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু, কুম্ভে যাওয়ার পথে নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু, এরা চাইছেটা কী? রেলের যাত্রী সুরক্ষা বলে কিছু নেই। একের পর রেল দুর্ঘটনা, লোকাল থেকে দূরপাল্লার ট্রেনে অনিয়মিত পরিষেবা, পানীয় জল, খাবার, অপরিচ্ছন্নতা-সহ অজস্র অভিযোগ। কোথাও ট্রেনের মধ্যে বহিরাগতরা ঢুকে পড়ে যাত্রীদের ওপর হামলা করছে। তার মধ্যে সামনে এল এই চূড়ান্ত অব্যবস্থার ছবি। দেশের রাজধানীর বুকে রেলস্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুমিছিল। এত কিছুর পরও নিজের চেয়ারে বসে আছেন রেলমন্ত্রী! প্রচারপ্রিয় রেলমন্ত্রী কি এবার বলবেন, আর কতগুলি দুর্ঘটনা, আর কতগুলি প্রাণ গেলে উনি বলবেন ওই চেয়ারটিতে বসে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার তাঁর নেই? যেভাবে রেলের নিরাপত্তা ও পরিচালন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি।”
এদিন ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে সমাজমাধ্যমে দুঃখপ্রকাশ করে পোস্ট করেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই পোস্ট মুছে ফেলা হয়। সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলে কুণাল বলেন, “কেন সেই পোস্ট মোছা হল? পিছনে কি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও চাপ ছিল?” মুখ খুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দুই সাংসদ সাগরিকা ঘোষ ও সাকেত গোখলেও। “এটা চরম দুর্ভাগ্যজনক ও মর্মান্তিক ঘটনা। অন্য ঘটনাগুলির মতো এক্ষেত্রেও মোদী সরকার তথ্য গোপন এবং ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রথমে তো সরকার মানতেই চায়নি এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে। পুরোটাই গুজব বলে ওড়ানোর চেষ্টাও হয়েছে। পরে বেকায়দায় পড়ে সরকার ঘটনার কথা স্বীকার করে নেয়। পুরো ঘটনা এটাই প্রমাণ করছে যে মোদী সরকার এতবড় জমায়েত সামলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। আমরা চাই সরকার অবিলম্বে মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করুক”, জানিয়েছেন সাগরিকা।