চোটের কারণে আসন্ন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ছিটকে গিয়েছেন ভারতের তারকা পেসার যশপ্রীত বুমরা। সিডনিতে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির পঞ্চম টেস্ট চলাকালীন চোট পান তিনি। তখনই বুমরার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স প্রাথমিক স্কোয়াডে বুমরাকে রেখেছিল বিসিসিআই। রিহ্যাবের মাধ্যমে তাঁকে ফিট করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু পুরোপুরি তৈরি হতে পারেননি বুমরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁকে ছাড়াই নামতে হবে রোহিতদের। আর এক অভিজ্ঞ পেসার মহম্মদ শামি সদ্য চোট সারিয়ে ফিরেছেন। পুরনো ছন্দে ফিরতে একটু হলেও সময় লাগবে তাঁর। কাজেই পেস বোলিং ইউনিটের গুরুদায়িত্ব সামলাতে হবে অর্শদীপ-হর্ষিতদের মতো তরুণদেরই। বুমরার না থাকা যে ভারতের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে, তেমনটা মনে করছেন অনেক ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞরাই। এবার ভারতের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ঋদ্ধিমান সাহার কথাতেও শোনা গেল একই সুর।
ঋদ্ধি জানিয়েছেন, “আমার মতে, সেটা একদম সঠিক কাজ ছিল। টিম ওর জন্য শেষপর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিল। দেখুন, যে কোনও টিম বুমরার মতো পেসারের জন্য শেষমুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আমি নিজে ওর সঙ্গে বহুদিন খেলেছি। জেনুইন ম্যাচ উইনার বলতে যা, বুমরাহ ঠিক তাই। মঙ্গলবার রাতে শুনলাম, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ছিটকে গিয়েছে বুমরা। ভারতীয় টিমের কাছে অবশ্যই বড় একটা ধাক্কা। অস্ট্রেলিয়া সফরে প্যাট কামিন্সের টিমকে সবচেয়ে বেশি যে নাজেহাল করেছিল, সেটা বুমরা। দুর্ধর্ষ বোলিং করেছে। দারুণ ছন্দেও ছিল। এই অবস্থায় বুমরার না-থাকায় ভারতীয় পেসাররা কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়বে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মনে করুন। যখনই দরকার পড়েছে, বুমরা এসে উইকেট বের করে দিয়েছিল। সেটা পাকিস্তান ম্যাচ বলুন কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফাইনাল। যে কোনও টিমই বুমরার সামনে পড়তে চাইবে না। নতুন বলে যেরকম এফেক্টিভ, একইরকম দুরন্ত মিডল ওভারেও। আর ডেথ ওভারের কথা ছেড়েই দিলাম। এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে ‘ডেথ ওভার মাস্টার’ যদি কাউকে বলা হয়, তাহলে সেটা বুমরা। শেষদিকে এক ওভারে সাত-আট রান বাকি থাকলেও আপনি বুমরার উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারবেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেই অভাবটা ভারত টের পেতে পারে।”
অন্যদিকে, মহম্মদ শামির প্রত্যাবর্তন যে রোহিতদের বড় ভরসা জোগাবে, সেকথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ঋদ্ধি। তাঁর কথায়, “বুমরার মতো শামিও দুর্দান্ত। ওর চলে আসাটা প্লাস পয়েন্ট। সবচেয়ে বড় কথা, আইসিসি টুর্নামেন্টে শামির রেকর্ড অসাধারণ। দেশের মাঠে ভারতের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রে শামির ভূমিকা অনস্বীকার্য ছিল। শামি কঠিন পরিস্থিতিতেও ম্যাচ বের করে নিয়ে আসতে পারে। সেই ক্ষমতা ওর মধ্যে রয়েছে। বুমরা-শামি যদি দু’জনে একসঙ্গে থাকত, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতকে পেস অ্যাটাক নিয়ে আর চিন্তা করতে হত না। কিন্তু কী আর করা যাবে, চোট-আঘাত কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।” তবে আর এক পেসার মহম্মদ সিরাজের বাদ পড়াটা খানিক অবাক করেছে ঋদ্ধিকে। সিরাজ অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না, তা বুঝে উঠতে পারেননি ‘পাপালি’। “আমি ভেবেছিলাম, বুমরা না থাকলে মহম্মদ সিরাজকে নিয়ে যাওয়া হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। কিন্তু বুমরার জায়গায় হর্ষিত রানাকে দেখে একটু অবাকই হয়েছি। সিরাজ অনেক বেশি অভিজ্ঞ। অনেকদিন ধরে ভারতীয় টিমের হয়ে খেলছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভিজ্ঞতা অবশ্য একটা ফ্যাক্টর। সিরাজ সেই চাপটা নিতে পারত। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট কী চাইছে, সেটাই আসল। হর্ষিতকে কেকেআরে খুব কাছ দেখেছে গম্ভীর। ওর হয়তো মনে হয়েছে হর্ষিতের মধ্যে সেই ক্ষমতা রয়েছে। তাই টিম ম্যানেজমেন্টের ভোট হর্ষিতের দিকে গেছে। এখন যদি ম্যানেজমেন্টে কোনও নির্দিষ্ট ক্রিকেটারকে টিমে চায়, তাহলে নির্বাচকদের সেটা দিতেই হবে”, বক্তব্য ঋদ্ধির।