আর জি কর-কাণ্ডে চিকিৎসকদের প্রতিবাদী আন্দোলনের আবহেই বেআব্রু হয়ে পড়েছিল তাঁদের দ্বিচারিতার চিত্র। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েও বেআইনিভাবে চুটিয়ে প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করেছেন বেসরকারি নার্সিংহোমে। আউটডোরে ডিউটিতে ফাঁকি দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে চিকিৎসা করার অভিযোগে এবার কাঠগড়ায় ১৯ চিকিৎসক। কোনও বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করবেন না, এই ভাষাতেই মুচলেকা দিয়ে সরকারের থেকে নন-প্র্যাকটিসিং অ্যালাউন্স নিয়েছিলেন ডাক্তাররা। অথচ বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিতে অবাধে প্র্যাকটিস চালিয়েছেন তাঁরা। এবার তালিকা ধরে ধরে সেই চিকিৎসকদের এবার ডেকে পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। বুধবার ১০ জনকে ও ২০ ফেব্রুয়ারি বাকিদের অর্থাৎ মোট ১৯ জনকে সশরীরে তদন্ত কমিটির সামনে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য।
পাশাপাশি, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অভিযুক্ত ঊনিশ চিকিৎসকের নামের তালিকাও প্রকাশ করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তালিকায় দেখা গিয়েছে, অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই ক্লাস ওয়ান গেজেটেড পদমর্যাদার স্বাস্থ্য আধিকারিক। ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন মেডিক্যাল অফিসার, একজন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং একজন সিনিয়র রেসিডেন্ট। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির সময় এঁরা প্রতিবাদের নামে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা জলাঞ্জলি দিয়ে প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে! তালিকায় রয়েছেন তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজের ডাঃ দীপঙ্কর প্রধান, ডাঃ সৌমিক সাহা, ডাঃ শৈবাল মাইতি, ডাঃ শিবশঙ্কর দে, ডাঃ ভজনচন্দ্র সরকার, ডাঃ সুপ্রতিম গিরি, শালবনি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ডাঃ দিলীপকুমার বেরা, হাওড়া জেলা হাসপাতালের ডাঃ আশুতোষ মাল, জাঙ্গিপুর সাব ডিভিশনাল হাসপাতালের ডাঃ সামিনুল্লা লস্কর, পাঁশকুড়া সাব ডিভিশনাল হাসপাতালের ডাঃ দেবদ্যুতি মহাপাত্র, এমআর বাঙুর হাসপাতালের ডাঃ সুশোভন মণ্ডল, কেশিয়ারি ব্লক প্রাইমারি হেলথ ক্লিনিকের ডাঃ প্রণয় ঘোষ, পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ডাঃ সায়ন হাজরা, রঘুনাথপুর সাব ডিভিশনাল হাসপাতালের ডাঃ সন্দীপকুমার প্রামাণিক, ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালের ডাঃ সৌম্যথ পাল, বাসুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালের ডাঃ ঔনিক দাস, বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালের ডাঃ অমিতকুমার হালদার, নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ডাঃ সরবিন্দ মণ্ডল।
প্রসঙ্গত, চিকিৎসকদের হাজিরার খাতায় তাঁদের নাম এবং তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ঢোকার প্রমাণ পেয়েই স্বাস্থ্য ভবনের তদন্ত কমিটি এই চিকিৎসকদের চিহ্নিত করেছে। হাজিরার সময় সর্বশেষ পে-স্লিপ ও প্রাইভেটে প্র্যাকটিসের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি-সহ বিভিন্ন নথি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, “নন-প্র্যাকটিসিং পোস্টে থেকে, সরকারের কাছ থেকে নন-প্র্যাকটিসিং ভাতা নেওয়া সত্ত্বেও আপনারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালিয়ে গিয়েছেন। স্বাস্থ্যইসাথী স্কিমে বেসরকারি ক্ষেত্রে রোগী দেখেছেন। সেই কারণেই আপনাদের তদন্ত কমিটির সামনে নিজেদের বক্তব্যর রাখার জন্য হাজির হতে বলা হচ্ছে।” সরকারের থেকে ভাতা নিয়েও সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা না দিয়ে কোন আক্কেলে বেসরকারি নার্সিংহোমে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন তাঁরা? চিকিৎসকদের কাছে স্পষ্ট জবাব চেয়েছে রাজ্য।