বছরের পর বছর কেটে গেলেও পরিস্থিতি রয়ে গিয়েছে সেই একইরকম। স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখে দিয়েছে মোদী সরকার। বারবার আবেদন-নিবেদন করেও মেলেনি বরাদ্দ। রাজ্যের বুকে একক প্রচেষ্টায় প্রকল্প চালু রেখেছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। একাধিকবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবার তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে সরব হল বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিই! মোদীরাজ্য গুজরাত-সহ আরও ৩ ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্য কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলল। সাফ জানাল, করের টাকা না বাড়ালে রাজ্য চালানো অসম্ভব। মমতা এতদিন যে অভিযোগ করে আসছিলেন, তা এবার ধ্বনিত হল বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের গলায়। শুধু প্রাপ্য টাকা আটকে রাখাই নয়, কেন্দ্র-রাজ্য ট্যাক্স-সম্পদের বণ্টনেও বৈষম্যের অভিযোগ আনল বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ‘ইন্ডিয়া’র জোটের অন্য মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীরা অর্থসংকটের হিসেব দাখিল করেছিলেন। এবার বিরোধীদের সঙ্গে সহমত হলেন বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরাও।
উক্ত তালিকায় গুজরাত ছাড়া রয়েছে হরিয়ানা এবং ওড়িশাও। ষোড়শ অর্থ কমিশনের কাছে তাঁদের দাবি, কর কাঠামোয় বদল এনে রাজ্যের প্রাপ্য বাড়াতে হবে। অন্তত ৫০ শতাংশ কর প্রদান না করলে রাজ্য চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ছে। তাঁদের এই দাবিই প্রমাণ করল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঠিক। বাংলা আজ যা ভাবে, সারা ভারত তা ভাবে আগামীকাল। গণতান্ত্রিক ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে প্রশাসনিক দায়িত্ব বণ্টনের ফর্মুলা তৈরি হয়েছিল। সংবিধান প্রণেতারা সেইমতোই পঞ্চায়েতি-রাজ আইন এনেছিলেন বিংশ শতাব্দীর নয়ের দশকে। কিন্তু মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বারবার সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় আঘাত হেনে রাজ্যগুলির ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করেছে এবং আর্থিকভাবে দুর্বল করেছে। আর তা করা হয়েছে রাজ্যগুলির কেন্দ্র-নির্ভরতা বাড়াতেই।
স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজ্য সরকারের ব্যয়-বরাদ্দে। প্রত্যেকটি রাজ্যই আর্থিকভাবে ধুঁকছে। কেন্দ্র ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলিতে অপেক্ষাকৃত বেশি প্রাপ্য দিচ্ছে, আর অবিজেপি রাজ্যগুলির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতদিন বিরোধীরা আওয়াজ তুলছিল। এখন সমানভাবে মুখর বিজেপি-রাজ্যগুলিও। বিগত ২০১৩ সালে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ ছিল, মোট প্রাপ্ত করের মধ্যে ৪২ শতাংশ রাজ্যের প্রাপ্য। ২০১৭ সালে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন তা কমিয়ে ৪১ শতাংশ করে। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে জনমুখী আর্থিক সহায়তা প্রকল্প বৃদ্ধির ফলে আর্থিক সংকুলান হচ্ছে না তাতে। নানা অজুহাতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে মোদী সরকার রাজ্যগুলিকে দুর্বল করে দিচ্ছে, যা কার্যত একনায়কতন্ত্রেরই সমার্থক। বাংলায় ২০১৩ সালে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় প্রায় ২ লক্ষ কোটি। ২০২৩ সালে ব্যয়বরাদ্দ হয়েছিল ২ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। অথচ বাংলার ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। বাংলার পাশাপাশি কেরল, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানার অর্থমন্ত্রীরাও একই অভিযোগ তুলেছেন। এবার কেন্দ্রকে নিশানা করল গুজরাত, হরিয়ানা ও ওড়িশাও।