আদৌ কি দুশ্চিন্তার প্রকোপ থেকে মুক্তি পেয়েছে সাধারণ মানুষ? চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বছরে ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড় দিয়েছে মোদী সরকার। তবে বাস্তবের চিত্রটা ধরা পড়ছে হিসেবের খাতাতেই। ঋণের বোঝার সঙ্গে দিনদিন বাড়ছে সুদের অঙ্ক। স্রেফ সুদ মেটাতেই কেন্দ্রের কোষাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে লক্ষ কোটি টাকা। আগামী অর্থবর্ষে (২০২৫-২৬) মোট ৫০ লক্ষ ৬৫ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা খরচ করবে বলেই সংসদে বাজেট পেশ করেছে কেন্দ্র। সরকারি হিসেব বলছে, তার মধ্যে সুদ মেটাতেই ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা চলে যাবে। অর্থাৎ, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে কেন্দ্র যত টাকা খরচ করবে বলে ঠিক করেছে, তার ২৫.২ শতাংশ চলে যাবে শুধুই ঋণের সুদ মেটাতে। আর এই পাহাড়প্রমাণ সুদের বাড়তি বোঝা বইতে হবে আমজনতাকেই। আয়কর তো বটেই, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার এই বিপুল অঙ্ক মেটাতে নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের উপর কর বা সেস চাপাবে। এবং নতুন করে বহু পণ্য চলে আসবে করের আওতায়। অর্থাৎ, ঘুরপথে আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলবে।

স্পষ্টতই, দেশের অর্থভাণ্ডারের হাল ক্রমশ করুণতর হয়ে পড়ছে। আরবিআই হোক বা বিশ্ব ব্যাঙ্ক, যেখান থেকেই কেন্দ্র ধার করুক না কেন, তার সুদ গুনতে হবেই। আর এই সুদ মেটানোর অঙ্কই নিত্যদিন বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে মোট ধারের উপর ৯ লক্ষ ২৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়েছে মোদী সরকারকে। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সুদ মেটাতে গিয়েছে ১০ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সেটি হয়েছে ১১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ফলে সাধারণ মানুষের উপর গড় ঋণের বোঝা তো বাড়ছেই, রাজকোষ থেকে কেবল সুদ দিতেই বেরিয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ধরলে দেশে-বিদেশে ১৮১ লক্ষ ৭৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ঋণ মেটাতে হচ্ছে ভারতকে। আগামী বছর সেটাই বেড়ে হবে ১৯৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। এই আবহে সোমবারও লোকসভায় চলবে বাজেট বিতর্ক। মঙ্গলবার জবাবি ভাষণ দেবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।