মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বারবার সংশয়ের মুখে পড়েছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিসর। পুলিশ হোক বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন সময় কাজে লাগাতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। এবার দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচনেও ফুটে উঠল তার ঘৃণ্য প্রতিচ্ছবি। আম আদমি পার্টিকে রুখতে নির্লজ্জভাবে কেন্দ্রীয় পুলিশকে কাজে লাগাল পদ্ম-পার্টি। রীতিমতো তাণ্ডব চালাল বিজেপি আশ্রিত গুণ্ডাবাহিনী। প্রতিরোধ করতে গিয়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন আপ কর্মী-সমর্থকরা। বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘটল দফায় দফায় সংঘর্ষ। এসব সত্ত্বেও দিল্লীর ৭০টি আসনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গড় ভোট পড়েছে ৫৭.৭০%। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে উত্তর পূর্ব দিল্লীতে ৬৩.৮%। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে দক্ষিণপূর্ব দিল্লীতে ৫৭.৭%। ভোট শেষ হওয়ার পর যথারীতি বুথফেরত সমীক্ষার নামে সুপরিকল্পিত বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে পদ্মশিবির।
বুধবার সীলমপুর, চিরাগ এবং জংপুরায় সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল। বেলা গড়ানোর সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ শুরু হয়। আপ এবং বিজেপি সমর্থকদের বেশ কয়েক জায়গায় হাতাহাতি করতে দেখা যায়। আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশের ভূমিকা ছিল অদ্ভুত! কোথাও তারা রইল নীরব দর্শকের ভূমিকায়, কোথাও বা আবার নির্লজ্জভাবে বিজেপির পক্ষ নিয়ে চড়াও হল আপ সমর্থকদের উপরে। সকাল থেকে আপের কর্মীদের উপর লাগাতার হেনস্থারও অভিযোগ আসে। আপের অভিযোগ, টাকা ছড়িয়ে ভোট কিনতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। পুলিশের মদতে ভোট লুঠও চালাচ্ছে অবাধে। বাইরে থেকে লোকও এনেছে। ভুয়ো ভোটারের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সকালেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সিলামপুর বিধানসভা এলাকা। শুরু হয় হাতাহাতি-ধস্তাধস্তি। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে কংগ্রেসও। দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে ভোটগ্রহণ।
বিজেপিকে একহাত নিয়েছেন আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ এবং সাংসদ সঞ্জয় সিং৷ দিল্লীর মসনদ থেকে আম আদমি পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বুধবার সকাল থেকেই দিল্লীর বিভিন্ন প্রান্তে ভোটারদের বাধা দিয়েছে বিজেপির গুন্ডারা, এমনই অভিযোগ তাঁদের। আপ স্পষ্ট জানিয়েছে, ভোটের আগের দিন রাত থেকেই দিল্লীর বিভিন্ন আসনে টাকা বিতরণ করে ভোটারদের প্রভাবিত করেছেন বিজেপির নেতা কর্মীরা। দিল্লীর জনতাকে বিজেপির এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়ে দলে দলে ভোটদানের আবেদনও জানিয়েছেন সৌরভ ভরদ্বাজ এবং সঞ্জয় সিং৷ কীভাবে দিল্লী পুলিশ বিজেপির চক্রান্তে সামিল হয়েছে তার বিবরণ দিতে গিয়ে আপ নেতা এবং দিল্লীর ভোটে প্রার্থী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, সকাল থেকেই দিল্লীর নানা কেন্দ্র থেকে ভোটারদের অভিযোগ আসছে, তাদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে৷ দিল্লী পুলিশের কর্মীরাই বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ভোটাররা৷ ভোটাররা বুথের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করা মাত্রই তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে৷ লম্বা লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়েও তারা ভোট দিতে পারছেন না৷ একই সুরে বিজেপিকে তীব্র নিশানা করেছেন আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং৷ তাঁর অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যে থেকেই দিল্লীর পাড়ায় পাড়ায় ভোটারদের প্রভাবিত করেছে বিজেপির নেতা-কর্মীরা৷ প্রচুর টাকা বিলিয়েছে। এমনকী বিজেপির পক্ষে ভোট না দিলে ফল ভালো হবে না, এই বলে হুমকিও দিয়েছে তারা।