অতিসম্প্রতি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের বিষাক্ত স্যালাইন-কাণ্ড ও প্রসূতি মৃত্যু ঘিরে ইতিমধ্যেই তোলপাড় সারা রাজ্য। চিকিৎসকদের গাফিলতির জেরে প্রাণহানির এমন ঘটনায় প্রবল ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তড়িঘড়ি বড় পদক্ষেপ নিলেন তিনি। মেদিনীপুরে মেডিক্যাল কলেজের আরএমও-সহ ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হল। সাসপেন্ড হওয়া ১২ জনের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মমতা স্পষ্ট বলেন, গাফিলতি থাকলে ফৌজদারি অপরাধ। যাঁদেরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে সেই ১২ জনের মধ্যে ৬ জন সিনিয়র ডাক্তার ও ৬ জন পিজিটি রয়েছেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যাদের কাছে ভাগ্য নির্ধারণ হয়, যারা যারা ওখানে ছিলেন তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এই মাকে বাঁচানো যেত। এত মেডিক্যাল কলেজ। অনেকে বলে এখানে নাকি তুলো ছাড়া কিছু মেলে না।” এরপর তিনি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কী কী উন্নয়ন হয়েছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এখানে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যে উন্নয়ন হয়েছে কোথাও হয়নি। চ্যালেঞ্জ ইট। ৪২টি নতুন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। ১৪ হাজার ৭৪১টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হবে। এখন বেডের সংখ্যা ৯৭ হাজার। ১৪ হাজার ডাক্তার নতুন করে নিয়োগ করা হয়েছে। ওবিসি নিয়ে আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি। ২৫৪৫ ছিল আসন সংখ্যা। এখন হয়েছে ২৮৪৬৭টি আসন। প্যারামেডিক্যালের কর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের যারা জয়েন করেছেন তাদের সেবাটা মূল কাজ। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা। চিকিৎসা ১ মিনিটও ওয়েট করে না কারোর জন্য। সিজার করেন সিনিয়র ডাক্তারা। এত স্টাফ, এত নতুন নতুন ভবন, এত টাকা বাড়ানো, মেডিক্যাল কলেজ বাড়ানো, রোগী যাতে পরিষেবা পায় সেটা দেখতে হবে।”
পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমাকে যদি সিজার করতে বলে আমি পারব না, কারণ আমি এটা নিয়ে পড়িনি। সিএসকে যদি বলেন সিজার করতে তিনি পারবেন না। চিকিৎসা কারা করবে। ডাক্তারদের কাছে যাবে মানুষ। রেফারেল সিস্টেম কমানো হয়েছে। আমি সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করব। এটা অন্যায় হয়েছে। লক্ষ লক্ষ লোক, কোটি কোটি লোকের ট্রিটমেন্ট হয় আউটডোরে। অনেক বেসরকারি হাসপাতাল আছে। সেখানে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড অ্যালাও হয়েছে। কখনও কখনও ছুটির দিন থাকবে, মহরম পুজো ইদ আসবে। কখনও গঙ্গাসাগরের মেলা আসবে। কেউ যদি মনে করেন তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন না। গত ৭২ ঘণ্টা টাইম দিয়েছি তদন্ত করার। অনেক জায়গায় অপারেশন থিয়েটারের গেটের বাইরে সিসি ক্যামেরা বসাতে দেন না। কেন হয় না। ভেতরেও তো সিসি ক্যামেরা থাকা দরকার। অনেক সময় প্রাইভেট পেসেন্টরা এটা চান না। সমস্ত অপারেশন থিয়েটারের গেট পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দাও। যদি কেউ আপত্তি করে প্লিজ ছুটি নিন। অনেক সময় দেখেছি একটা অ্যাক্সিডেন্ট কেস গেল জুনিয়ররা দেখেই বলে দেন মারা গেছেন নিয়ে চলে যান। কিন্তু চেষ্টা তো করে দেখতে হবে। ” মমতা এও জানান, ভালো করে পুনরায় উক্ত স্যালাইন পরীক্ষা করা হবে।