Mamata Banerjee তৃতীয়বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পথে শপথ নেওয়ার পর থেকেই রাজ্যকে আরও শিল্পবান্ধব করে তোলার বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতোই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে তাঁর সরকার। বাংলাকে বিশ্বমানচিত্রে তুলে ধরাই লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রীর। বাংলার নিজস্ব ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নতিসাধনে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এবার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উৎকর্ষকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে অভিনব উদ্যোগ নিল রাজ্য। সমস্ত জেলা সদরে বিশেষ শপিং মল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, এজন্য জমি চিহ্নিত করার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। তা মল তৈরি করতে আগ্রহী সংস্থাকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। তবে মলের দু’টি তলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের জন্য দিতে হবে। এই শর্তেই আগ্রহী সংস্থাকে দেওয়া হবে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানান, চর্মশিল্পে বাংলার খ্যাতি এখন পৃথিবীব্যাপী। এবার দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের সামনে একে আরও ভালভাবে তুলে ধরতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আলিপুর জেল মিউজিয়ামের সামনে চর্ম ও কুটির শিল্পসামগ্রীর একটি শপিং মল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। যেটি রূপায়ণের কাজ করবে হিডকো। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওই শপিং মলের ৫০ শতাংশ জায়গাতেই থাকবে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সের উৎপাদকদের তৈরি বিভিন্ন চর্মজাত পণ্য। আর বাকি ৫০ শতাংশ জায়গায় থাকবে বাংলার শাড়ি-সহ হস্তশিল্পের অনন্য সংগ্রহ।
উল্লেখ্য, মল গড়ে তোলার জন্য প্রথম পর্যায়ে ১০টি শহরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এগুলি হল উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ইংরেজবাজার এবং দক্ষিণবঙ্গের বহরমপুর, দুর্গাপুর, আসানসোল, বর্ধমান, দিঘা, মেদিনীপুর ও চন্দননগর। রাজ্যে এই মুহূর্তে গ্রামাঞ্চলে ১২ লক্ষ ৫ হাজার ৯৪৬টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ২২ লক্ষের বেশি। সবাই মহিলা। শহরাঞ্চলেও আরও কয়েক লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। এদের প্রধান সমস্যা হল বিপণন। স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির কাজ শুরুতেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজার করতে সরকারি উদ্যোগে ব্র্যান্ড তৈরি করার কথা বলা হলেও বিশেষ এগোয়নি সে-কাজ। এমত অবস্থায় হস্তশিল্প থেকে আচার, পাঁপড়, মোরব্বা, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতে তৈরি হাজারো সামগ্রীর জন্য বিস্তৃত বাজার তৈরি করে দিতেই এহেন উদ্যোগ। এই ১০টি শহরের প্রতিটিতে গড়ে তোলা হবে ৫ তলা শপিং মল, যার নিচের দু’টি তলায় থাকবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি নানা পণ্য। বাকি অংশে গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে ক্যাফেটেরিয়া, সিনেমা হল সবই থাকবে। এই ভাবনাকে সামনে রেখেই কলকাতার ঢাকুরিয়ার কাছে দক্ষিণাপনের পাশে বাংলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য চালু হয়েছে নিজস্ব মল। সেই ধাঁচেই মল গড়ে তোলা হবে জেলার শহরেও।

এদিকে আলিপুরকে কেন্দ্র করে বিনোদন এবং বিপণনের নতুন একটি গন্তব্য তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিড়িয়াখানার উল্টোদিকের একটি জমিতে পুরোদস্তুর একটি বাণিজ্য ও বিপণন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে থাকবে একটি মাল্টিপ্লেক্সও। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, দ্বিতীয় কেন্দ্রটি হবে আলিপুর জেল মিউজিয়ামের পিছনে খালি জমিতে। সেই জমিতেই চর্মজাত দ্রব্য এবং বাংলার শাড়ির বিপণন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করেছে সরকার। ওই এলাকায় ধনধান্য এবং উত্তীর্ণ প্রেক্ষাগৃহ হয়েছে। সেই সঙ্গে সেখানে বড় আয়তনের আধুনিক পার্কিংয়ের জায়গাও রয়েছে। কলকাতা শহরের এমন প্রাণকেন্দ্রে যাতায়াত রয়েছে উচ্চবিত্ত থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেরই। জেল মিউজিয়ামের কল্যাণে সেখানে পর্যটকদের আনাগোনাও অনেক বেড়েছে। ফলে ওই গোটা তল্লাট বিনোদন এবং বিপণনের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে সরকার। এছাড়াও মন্ত্রিসভার বৈঠকে দমকল বিভাগে ২৬৪ জনকে নতুন পদে নিয়োগ করা হবে বলে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। জঙ্গিপুর ও দাঁইহাট, এই দুটি নতুন কেন্দ্র ছাড়াও মোট ছ’টি অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্রে বিভিন্ন পদে ৪৪ জন করে নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে নবান্ন।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1872535489758331243