শীর্ষে আদালত আরও একবার ধাক্কা গেল ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলির অতিপরিচিত ‘বুলডোজার নীতি’। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন সময় এই রাজ্যগুলিতে নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নিদান। অপরাধী বা নিছক অভিযুক্তের বাড়ি বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে ফেলাকে বিজেপিশাসিত রাজ্যে সুবিচারের মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার মরিয়া চেষ্টা চলছে গত কয়েক বছর ধরেই। ‘বুলডোজার জাস্টিস’-এর জনক উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যোগীর অতিপরিচিত এই মডেলের অনুকরণেই মধ্যপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্র, বিজেপিশাসিত প্রতিটি রাজ্য তাদের শাসনব্যবস্থায় বুলডোজার নীতিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়ি, ঘর, দোকানপাট। সেই ‘বুলডোজার জাস্টিস’ নিয়েই ফেদ যোগী সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। সাফ জানাল, সরকার-প্রশাসন বিচার করার কে? তারা বিচারক নয়। অভিযুক্ত অথবা সাজাপ্রাপ্ত হলে তার বাড়ি বা সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলতে পারে না সরকার। আইন হাতে নেওয়ার অর্থ, লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করা। অপরাধের বিচার করবে বিচারবিভাগ। সরকারকে সেই ক্ষমতা দেয়নি দেশের আইন।
প্রসঙ্গত, জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ-সহ আরও কিছু আবেদনের ভিত্তিতে বুধবার শীর্ষ আদালত দেশের একাধিক বিজেপিশাসিত বহু রাজ্যের উপরে ক্ষুব্ধ হয়েছে। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, এটা কোনও বিচারব্যবস্থাই নয়। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আগে অনেকগুলি স্তর পেরিয়ে আসতে হয়। নোটিশ দেওয়া, জরিমানা, মামলা এবং তারপর কাঠামো অবৈধ প্রমাণিত হলে তা চিহ্নিত করা। সব ব্যর্থ হলে বুলডোজারের ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে রাতারাতি মানুষকে ঠাঁইহারা করে দেওয়ার বিনিময়ে নয়। সংবিধান এভাবে বিচারের অধিকার দিয়েছে? প্রশ্ন শীর্ষ আদালতের। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রশাসন অর্থাৎ সরকার কাউকে দোষী ঘোষণা করতে পারে না। সেই অধিকার কেবল বিচার বিভাগের উপর ন্যস্ত। বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন বুধবার বলেছেন, “লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ সম্পত্তি চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, একই রকম অন্য সম্পত্তিতে হাত দেওয়া হয়নি। নিছক বেআইনি কাঠামো বলেই কারও বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এমন নয়! নিশ্চয়ই অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে বুলডোজার জাস্টিসের! বেআইনি নির্মাণ ভাঙারও দীর্ঘ প্রক্রিয়া রয়েছে। সরকার কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করল, আর হঠাৎ তার বাড়ি ভেঙে দেওয়া হল, এমন হতে পারে না। এমন ঘটলে বুঝতে হবে, রাজ্যে আইনের শাসন নেই। আইনিভাবে কোনও কিছু ভাঙার নোটিশ অনুমোদিত হলেও সময় দিতে হবে।” উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি সতর্ক করেছে সরকারি আধিকারিকদেরও। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, প্রশাসন বা পুলিশ যেই হোক, যাঁরাই অবৈধভাবে বুলডোজার জাস্টিসের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, দায় নিতে হবে তাঁদের। তাঁদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাঁরা বেআইনি কাজ করেছেন এমন প্রমাণিত হলে, ব্যক্তিগত খরচে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাঁদের।