বছরের পর বছর কেটে গেলেও বাংলার প্রতি মোদী সরকারের দুয়োরানিসুলভ আচরণ রয়ে গিয়েছে সেই একইরকম। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভরাডুবির পর থেকে তা বেড়েছে আরও। বাংলাকে দীর্ঘদিন ধরেই বঞ্চনা করে আসছে কেন্দ্র। মনরেগা প্রকল্পের আওতায় ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার প্রাপ্য ন্যায্য টাকা আটকে রাখা হয়েছে৷ এবার সারের বণ্টনের ক্ষেত্রেও ধরা পড়ল একই ছবি। কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী, চাষে ব্যবহৃত বিশেষ একটি সার (এনপিকে ১০-২৬-২৬) শুধুমাত্র কেন্দ্রের তরফেই সরবরাহ করা হয় বাংলায়। অন্য জায়গা থেকে তা নেওয়ার উপায় নেই। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, সেই সার সরবরাহের পরিমাণ একধাক্কায় অর্ধেক করে দিয়েছে মোদী সরকার! বিশেষত আসন্ন আলু চাষের রবি মরশুমে এই সারের সরবরাহ নিয়ে সংকটের সম্মুখীন কৃষকরা। এই অবস্থায় ফায়দা তুলছে এক শ্রেণির অসাধু সার ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার নবান্নে জরুরি বৈঠক করলেন কৃষি ও পঞ্চায়েত দফতরের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং প্রদীপ মজুমদার। কৃষি দফতরের প্রধান সচিব ওঙ্কার সিং মিনা, কৃষি অধিকর্তা-সহ অন্য আধিকারিকরা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত আলু চাষের জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে রবিচাষে ৬ লক্ষ ৭২ হাজার হেক্টর কৃষি জমির জন্য ৫ লক্ষ ১ হাজার মেট্রিক টন এনপিকে সারের প্রয়োজন হয়। এদিন দীর্ঘ দু’ঘণ্টারও বেশি আসন্ন শীতের মরশুমে পর্যাপ্ত জোগান ও তার বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েও পর্যালোচনা হয়েছে। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়ে মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, মাঝে মধ্যেই এই ধরনের নানা সমস্যায় আমাদের পড়তে কেন্দ্রের অদূরদর্শী আচরণের কারণে। একটি তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “২০২১ সালে যে সার বাংলায় এসেছে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন। লক্ষণীয়ভাবে তা কমে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা একাধিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। কেন্দ্রকে বারবার চিঠি দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। সারের ঘাটতির কারণে যাতে কৃষকদের কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়, রাজ্য সরকার তা নিশ্চিত করবে।” একইসঙ্গে ই-পজ মেশিনে বাধ্যতামূলকভাবে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে চাষিদের কাছে সার বিক্রি করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সার বিক্রির সময় চাষীদের অতিরিক্ত কিছু বিক্রি যাবে না বলেও ব্লকের কৃষি আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের নজরদারি চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ২০২১-এর তুলনায় ২০২২-২৩-এ সারের (এনপিকে ১০-২৬-২৬) বরাদ্দ কমে দাঁড়ায় ২.২৭ লক্ষ মেট্রিক টন। এখন বরাদ্দ আরও কমে ২.২৩ লক্ষ মেট্রিক টনে। এই পরিমাণ হলেও তা এখনও রাজ্যে এসে পৌঁছয়নি। কেন্দ্রকে একহাত নিয়ে তাঁর বক্তব্যর “আগে আর্থিক বঞ্চনা ছিল, এখন বাংলার বিরুদ্ধে সমস্ত কিছুতেই বঞ্চনা শুরু করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার।” মন্ত্রীর এনপিকে সারের বিকল্প যে সব সার রয়েছে, বিক্রয়কেন্দ্রগুলিতে তার তালিকে ও দাম বাধ্যতামূলকভাবে প্রকাশ্যে লিখে রাখার কথা বলেছে রাজ্য।