ক্ষমতার আসার পর থেকেই দেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতিতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কয়েক বছরের মধ্যে নাকি ভারত ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হবে, চলছে এমনই প্রচার। অথচ প্রদীপের নীচের আঁধার! চলতি আর্থিক বছরের শেষেই ১৮৫ লক্ষ কোটি টাকার ঋণের বোঝা চাপতে চলেছে কেন্দ্রের কাঁধে। সেরকমই অনুমান অর্থমন্ত্রকের। বাড়ছে সুদের বোঝা। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম সাত মাসে সুদ মেটাতে ব্যয় হয়েছে অন্তত ৬ লক্ষ কোটি টাকা। ঋণ এবং সুদ বৃদ্ধির এই প্রবণতা বজায় থাকলে বাজেটে এই খাতে ব্যয় সাড়ে ১১ লক্ষ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী অর্থবর্ষের বাজেট প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কীভাবে আয় বাড়ানো সম্ভব? চিন্তায় অর্থমন্ত্রক। ঘাটতি কমাতে তাই দু’টি পথই অবলম্বন করার কথা ভাবা হয়েছে। ভর্তুকি ছাঁটাই এবং কর বৃদ্ধি। সেই লক্ষ্যেই বাজেট তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকারি সূত্র। এমনিতেই পেট্রোল-ডিজেলে ভর্তুকি ভুলে গিয়েছে জনগণ। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকিও ঘোরাফেরা করছে মাত্র ২০ টাকার আশপাশে। কেবল কৃষিক্ষেত্রে সার এবং রেশনের খাদ্যপণ্যের উপর ভর্তুকিই বলার মতো। সঙ্গে রয়েছে আরও কিছু সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প। তাতেও যদি কোপ নেমে আসে, দিশাহারা হয়ে পড়বে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এছাড়া কীভাবে কর কাঠামোকে সম্প্রসারিত করে আরও বেশি ট্যাক্স আদায় সম্ভব, তা নিয়েও এখন আলোচনা চলছে। ওই প্রক্রিয়ার মধ্যে জিএসটি সংস্কার যে পড়বে, তা কার্যত নিশ্চিত।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৪ সালে ভারতের মোট ঋণ ছিল ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। ১০ বছরে তিনগুণেরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ঋণ। রাজস্ব থেকে বাণিজ্য, ঘাটতি সর্বত্র। আমদানি-রফতানির ভারসাম্যহীনতায় নাজেহাল শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রক। অর্থমন্ত্রক জেরবার আয়ব্যয়ের বৈষম্যে। মূল্যবৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণহীনতায় চিন্তিত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম, সঙ্গে চড়া ইএমআই। আয় কিন্তু বাড়েনি মধ্যবিত্ত করদাতাদের। অর্থনীতি সেই তিমিরেই। অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের বোঝা চাপলে সবথেকে বৃহৎ যে আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে হয় রাজকোষকে, তা হল বিপুল সুদ মেটানোর চাপ। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, দুই ত্রৈমাসিক মিলিয়ে সুদ মেটাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৫ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা। অক্টোবরে তা বেড়ে ৬ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে। একই সময়সীমায় অর্থাৎ, ছ’মাসে সরকারের আয় হয়েছে ১৬ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। সেই আয়ের সিংহভাগ জনগণের থেকে আদায় করা। অর্থাৎ ট্যাক্স। ১২ লক্ষ ৬৫ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছে চলতি অর্থবর্ষেরর প্রথম ছ’মাসে। আর এই সময়সীমায় সরকার ব্যয় করেছে ২১ লক্ষ ১১ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি সুদ এবং ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা ভর্তুকি বিল। অর্থ কমিশনের ফর্মুলা অনুযায়ী, কেন্দ্রের মোট আয়ের একাংশ দিতে হয় রাজ্যগুলিকে। বিগত ছ’মাসে তারা পেয়েছে ৮৯ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। এ নিয়ে প্রতিটি রাজ্যই অসন্তষ্ট। আদায়ীকৃত কর থেকে প্রাপ্য টাকার ফর্মুলা বদলের জন্য প্রবল চাপ দিচ্ছে বিরোধীশাসিত রাজ্য সরকারগুলি। সমর্থন দিচ্ছেন এনডিএ’র মুখ্যমন্ত্রীরাও। বর্তমানে রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয় মোট আদায়ীকৃত ট্যাক্সের ৪১ শতাংশ। এই হার অন্তত ৫০ শতাংশ করার দাবি উঠেছে। যদিও সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, ঋণের বোঝা নিয়ন্ত্রণ করতেই চূড়ান্ত অসফল কেন্দ্র।