কেটে গিয়েছে বছরের পর বছর। কিন্তু বাংলার প্রতি মোদী সরকারের দুয়োরানিসুলভ আচরণ রয়ে গিয়েছে সেই একইরকম। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভরাডুবির পর থেকে তা বেড়েছে আরও। বাংলাকে দীর্ঘদিন ধরেই বঞ্চনা করে আসছে কেন্দ্র। মনরেগা প্রকল্পের আওতায় ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার প্রাপ্য ন্যায্য টাকা আটকে রাখা হয়েছে৷ আর এবার সেই বঞ্চনার কোপ নেমে এল বাংলার চা-বলয়ের উপরেও। চা-শিল্পকে ধ্বংস করতে নয়া ছক কষতে শুরু করেছে কেন্দ্র। চা-তোলা শেষ করার ক্ষেত্রে প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময় ধার্য রয়েছে। অথচ সেই নিয়ম ভেঙে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিরাট আঘাত হানছে মোদী সরকার। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে চা তোলা শেষ করতে হয়। কিন্তু কেন্দ্রের টি-বোর্ড সেই সময় ৩০ নভেম্বর এগিয়ে নিয়ে এসেছে। একমাস আগে চা-তোলা শেষ করলে উৎপাদন হবে অনেকাটাই কম। এর সম্পূর্ণ প্রভাব পড়বে চা-শিল্পের ওপর, এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উত্তরের অর্থনীতি বেশির ভাগটাই চা-শিল্পের ওপর নির্ভর করে। রাজ্য বাজেটে চা শিল্পের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে একাধিক ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চা-শ্রমিকদের উন্নয়নে রাজ্য বিরাট ভূমিকা পালন করেছে, অথচ কেন্দ্রের কাছে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে চা-বলয়। সম্প্রতি টি-বোর্ডের তরফে জারি করা সার্কুলার বাগানে একটি বড় ধাক্কা। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন আইএনটিটিইউসির দার্জিলিং জেলা (সমতল)-এর সভাপতি নির্জল দে। “বিজেপির সাংসদ শ্রমিকদের ২০ শতাংশ বোনাস দাবি করছেন অথচ তিনিই টি-বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে শিল্প ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ব্রিটিশ আমল থেকে চা তোলা শেষ করার সময় ডিসেম্বর মাস। এবারই কেন্দ্রের টি-বোর্ড সেই নিয়ম ভাঙল। উত্তরের অর্থনীতি নিয়েও বিরাট চিন্তা। এরই সঙ্গে এতগুলি শ্রমিকের ভবিষ্যতও রয়ে গেল প্রশ্নচিহ্নের মুখে। নিরীহ চা-শ্রমিকেরা জটিলতা বোঝেন না। তাঁদের প্রলোভন দেখিয়ে ভুল পথে চালিত করে বিজেপির নেতারা নিজেরা ফায়দা তুলছেন। অথচ বোর্ডের তরফে নির্দিষ্ট কোনও বৈঠক করে শ্রমিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। টি-বোর্ডের এই খামখেয়ালিপনায় উত্তরের অর্থনীতির যে বিপুল ক্ষতি হবে তার দায় কেন্দ্র নেবে তো?”, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।