আরও একবার বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশে ফুটে উঠল ধর্ষণের অভাবনীয় নারকীয়তা। যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হবার পর থেকেই সে রাজ্যে বারবার বেআব্রু হয়েছে নারীনিরাপত্তা ও নারীসুরক্ষার করুণ চিত্র। একের পর এক নৃশংস ও পাশবিক ধর্ষণের ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন ‘ডবল ইঞ্জিন’ উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দারা। হাথরাস, উন্নাও থেকে শুরু করে তালিকা দীর্ঘ হয়ে চলেছে দিনের পর দিন। তবু্ও মেলেনি কোনও সুরাহা। নারীনিরাপত্তার পরিস্থিতি এখনও সেই তিমিরেই। এবার প্রকাশ্যে এল আরও একটি ঘটনা। স্থান ‘রামের জন্মভূমি’ অযোধ্যা। গণধর্ষণের শিকার হলেন রামমন্দিরেরই একজন মহিলা সাফাইকর্মী! পাশাপাশি তিনি একজন কলেজ ছাত্রীও। ঘটনায় শুক্রবার আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নির্যাতিতা জানান, গত ১৬ আগস্ট তাঁকে একটি গেস্ট হাউসে নিয়ে যায় তাঁর পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তি। তার নাম বংশ চৌধরী। নির্যাতিতাকে আটকে রাখা হয় সেখানে। একে একে তাঁকে ধর্ষণ করে বংশ-সহ আরও কয়েকজন। এরপর গেস্ট হাউস থেকে নির্যাতিতাকে বনবীরপুরের একটি ব্যারেজে নিয়ে গিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয় তাঁর। ১৮ আগস্ট ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। অভিযুক্ত বংশ অযোধ্যার শাহাদতগঞ্জের বাসিন্দা। পাশাপাশি আরও দুই অভিযুক্ত, বিনয় কুমার এবং মোহাম্মদ শারিককে চিহ্নিত করেন নির্যাতিতা। তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকিও দেয় অভিযুক্তরা। স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ফলত, সেসময় অভিযোগ জানাতে পারেননি পুলিশে। এখানেই শেষ নয়। পুলিশের কাছে অভিযোগে নির্যাতিতা এও জানিয়েছেন, ২৫ আগস্ট মন্দিরে যাওয়ার সময় তাঁকে অপহরণ করে বংশ। সঙ্গে ছিল উদিত কুমার, সাতরাম চৌধুরী ও অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তি। গাড়ির মধ্যে ফের নির্যাতিতার শ্লীলতাহানি করা হয়। গাড়ি একটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারার পর কোনওক্রমে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে যে ঘটনাস্থলের কথা নির্যাতিতা তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তার প্রতিটিই শহরের ‘হাই সিকিউরিটি জোন’। পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, ২৬ আগস্ট তিনি থানায় এফআইআর দায়ের করতে গেলেও তখন সেই অভিযোগ নথিভুক্ত করেনি পুলিশ। এরপর শেষমেশ ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় তাদের। ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে যোগী-প্রশাসন। নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। সরব হয়েছে বিরোধীরা। ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও। গত কয়েক বছর ধরে উত্তরপ্রদেশ কার্যত ধর্ষকদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। এতে যে যোগী-সরকার তথা দেশের শাসকদল বিজেপির অস্বস্তি উত্তরোত্তর বাড়ছে, তা বলাই বাহুল্য।