ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলার প্রতি দুয়োরানিসুলভ আচরণ অব্যাহত রেখেছে মোদী সরকার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উঠেছে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ। অতিসম্প্রতিই পেশ করা নতুন কেন্দ্রীয় বাজেটেও ফুটে উঠেছে সেই চিত্র। ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনায় বঞ্চনার শিকার বাংলা। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বঞ্চনা এবং দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে এবার উত্তাল হল লোকসভা। মঙ্গলবার সংসদে সরব হন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এল তাঁর বক্তব্যে। অভিষেক বললেন, “যেদিন আমি সংসদে আমার বক্তব্য দিয়েছিলাম, সেদিন আমি বলেছিলাম যে আমি আমার তথ্য সংসদে রাখতে পারি এবং মন্ত্রী পাল্টা তথ্য উপস্থাপন করতে পারেন। একজন মন্ত্রীর লোকসভায় তথ্য ও নথির ভিত্তিতে কথা বলা উচিত। এজন্য আমি তাকে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে বলেছিলাম। কাগজ ঝুথ নেহি বোলতা। আমি নির্মলা সীতারামনকে একটি সহজ প্রশ্ন করেছিলাম, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হেরে যাওয়ার পরে, আবাস এবং মনরেগা প্রকল্পের জন্য কত টাকা দেওয়া হয়েছিল? এদিন সংসদে ছিলেন ২৯ জন এআইটিসি সাংসদ। আমরা ভেবেছিলাম এফএম একটি সাদা কাগজ সরবরাহ করতে পারেন। তবে তিনি তা করতে পারেননি। তিনি পরিকল্পিতভাবে দুই কক্ষে মিথ্যা কথা বলে দেশ ও বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন। তিনি একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। আমার কাছে যদি শ্বেতপত্র থাকে তবে আমি এটি সরবরাহ করতে দ্বিধা করব না। তারা এই জাতীয় কাগজ পাবলিক ডোমেনে দেখাতে পারছে না, কারণ তাদের কাছে তথ্য নেই। আজ পর্যন্ত বাংলার ১.৭২ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে তারা।”
পাশাপাশি, অভিষেক জানান, “দু’দিন আগে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নীতি আয়োগে একই বিষয় উত্থাপন করতে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি একমাত্র বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি গিয়েছিলেন, কারণ বিজেপির সাথে তাঁর মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু তাঁকে জনগণের দাবি উত্থাপন করতে হয়েছিল। আমরা মাথা নত করতে প্রস্তুত কিন্তু আমাদের অধিকারের জন্য ভিক্ষা করতে রাজি নই। গোয়া, অন্ধ্র এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রায় ২০ মিনিট বক্তব্য রাখার অনুমতি দেওয়া হলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ২ মিনিটের বেশি যেতে দেওয়া হয়নি এবং ঘণ্টার শব্দে বাধা দেওয়া হয়। এটা হতে দেওয়া যাবে না। তাঁরা ভাষণে বাংলার উল্লেখ করেননি। তারা কি বিহারে সেতু নির্মাণের জন্য বাংলা থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে, যা পরে ভেঙে পড়বে? তারা গরিব ও মিডিয়াকে দমিয়ে রেখেছে। দেশের মানুষ এসব দেখছে। বাংলা থেকে নির্বাচিত ১২ জন বিজেপি সাংসদকে জিজ্ঞাসা করা উচিত যে, তাঁদের মধ্যে একজনও কি আবাস ও মনরেগার জন্য বাংলাকে দেওয়া তহবিলের শ্বেতপত্র চেয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের চিঠি লিখতে পারেন? নিছক শব্দ কাজ করবে না। তারা কেন শ্বেতপত্র প্রকাশ করছে না? বাংলার মানুষের জন্য কত টাকা খরচ করেছেন, তা দেখাতে বলুন। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে আমরা হেরেছি। যান এবং এমন কোনও একক মহিলার সন্ধান করুন যিনি বলেছেন যে তিনি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা পাননি। পুরুলিয়া বা কাঁথিতে এমন কোনও মহিলাও খুঁজে পাবেন যিনি বলতে পারেন যে তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দেননি, কন্যাশ্রীকে পাননি। আমরা বৈষম্যের রাজনীতি করি না। যারা এ ধরনের কথা বলছে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবর মাসে অভিষেক ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তৃণমূল দিল্লীতে বাংলাকে আর্থিক বঞ্চনার প্রতিবাদে কৃষি ভবনে অভিযান করেছিল। দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল দাবি জানিয়ে আসছে যে, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে বিজেপি বাংলায় হারার পর থেকেই ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার। ১৩৮ দিন এবং ৩৩১৯ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও মনরেগা এবং আবাস যোজনায় একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারেনি পদ্ম-নেতৃত্ব। যা নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এবার ফের সুর চড়ালেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড।